বিদেশ ডেস্ক:
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠী বলে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। তার দাবি, রোহিঙ্গারা কখনও মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠী ছিল না; এটি ‘বাঙালি ইস্যু’। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নিজের সরকারি ফেসবুক পেজে এমন দাবি করেছেন বলে রবিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করছে অথচ তারা কখনও মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠী ছিল না। এটি ‘বাঙালি’ ইস্যু। আর এই সত্য প্রতিষ্ঠায় আমাদের একতাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।’

দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক তিক্ততা চলে আসছে রাখাইন বৌদ্ধ ও রাজ্যটিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে। দেশটিতে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়, এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা জোর দিয়ে বলে আসছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। তারা রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ বলে থাকে। তিক্ততার ফলে ২০১২ সালে রাখাইনে ভয়াবহ মুসলিমবিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়। সেসময় ১ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। তখন থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে ৪ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রাখাইন রাজ্যে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার হওয়ার পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। তাই পালিয়ে আসতে থাকে মানুষেরা।