মাহাবুবুর রহমান, টেকনাফ থেকে ফিরে:

টেকনাফ পৌরসভার মূল স্টেশনের মিলকী রির্সোসের সামনে দাড়ালে দেখা যাবে প্রতি ১০ মিনিটে ১ টি করে রোহিঙ্গা ভর্তি গাড়ি এসে থামছে। ে জীপ, পিকআপ, এমনকি ধান পরিবহণের গাড়ী দিয়েও চলছে রোহিঙ্গা আনা। প্রতিটি গাড়ীতে আছে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে নারী শিশুর সংখ্যাই বেশি। নতুন আসা রোহিঙ্গারা প্রথমে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে মিলকী রির্সোসের সামনে অথবা উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে পরে চলে যায় নির্দিস্ট গন্তব্যে। সরজমিনে দেখা গেছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অর্ধের ছেয়ে বেশি চলে যাচ্ছে তাদের আত্বীয় স্বজনের বাড়ি। আর বাকি গুলো নির্দিস্ট ক্যাম্পে। স্থানীয়দের দাবী এখনো দৈনিক অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা আসছে। এবং এই আসার ¯্রােত কখন শেষ হবে তা কেউ জানে না।

১৫ সেপ্টেম্বর সকাল বেলা ১১ টা টেকনাফ পৌর এলাকার ব্যাস্ততম এলাকা মিলকী রির্সোসের সামনে দাড়িয়ে দেখা গেছে প্রতি ১০ মিনিট পর পরই আসছে রোহিঙ্গা বুঝাই গাড়ী, কখনো জীপ, কখনো পিকআপ মাইক্রো, আবার কখনো ধান পরিবহণের গাড়ি দিয়ে আসছে রোহিঙ্গার ঢল। এবং প্রতিটি গাড়িতে খুব গাদাগাদি করে বসে আসছে রোহিঙ্গারা। এ সময় সবে মাত্র টেকনাফ বাজারে পা দেওয়া রোহিঙ্গা মজিলা বেগম (৫৫) বলেন আমরা বার্মার মংডু থাকি কিন্তু এখন সেখানে (মগ) মায়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে সবাই চলে এসছে তাই আমরা একা সেখানে থেকে কি করবো ? সে জন্য আমর্ওা চলে আসছি। তার সাথে আছেন ৪ ছেলে ২ মেয়ে এবং ৫ নাতী, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বর্তমানে সেখানে কাটাকাটি কিছুটা কমেছে তবে পুরু গ্রামে কেউ নেই সবাই বাংলাদেশে চলে এসেছে শুধু আমরা কয়েক ঘর ছিলাম এখন আমরা চলে আসছি।

এসময় নতুন আসা আরেক রোহিঙ্গা নজির মিয়া (৪৫) বলেন আমিও এই মাত্র আসলাম, শাহপরীর দ্বীপ ভাঙ্গার মুখ থেকে গাড়ী নিয়ে এখানে আসলাম ৯ জনের পরিবার নিয়ে খুব কস্ট করে এসেছি, এখন কিছু দিন আমাদের আত্বীয় আছে টেকনাফে সেখানে থাকবো তার পরে প্রয়োজন বুঝে কি করা যায় সেটা দেখবো। তিনি বলেন বর্মাতে সবাই জানে বাংলাদেশের হুকুমত (সরকার) আমাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তাই আমরা চলে আসছি, সেখানে আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই এখানে আরো আগে আমাদের অনেক আত্বীয় স্বজন এসেছে তারা খুবই ভাল আছে এরা এখন অনেক টাকা পয়সাও করেছে তাই আমরাও এখন থেকে বাংলাদেশে থাকবো। একই সাথে থাকা আব্বাস আলী নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন বার্মাতে আমাদের বাপদাদার ভিটামাটি এবং কবর আছে যদি বার্মা সরকার আমাদের ভাল ভাবে ফেরত নেয় আমরা অবশ্যই বার্মাতে ফেরত যাব।

এ সময় স্থানীয় অনেক মানুষ এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মানুষ তাদের নানান ভাবে সহযোগিতাকরতে দেখা গেছে। এর কিছুক্ষন পরে আরো ২ টি গাড়ীতে করে আবারো অর্ধশত রোহিঙ্গা আসতে দেখা গেল, এ সময় তাদের গাড়িতে করে আনা চালক ফরিদ বলে রোহিঙ্গার আমি ভাঙ্গার মুখ থেকে এনেছি। সবাই মিলে আমাকে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। তিনি বলেন শাহপরির দ্বীপ ভাঙ্গার মুখ থেকে সার্বক্ষনিক রোহিঙ্গা আসতেই আছে নৌকা করে তারা আসে আবার তাদের নিয়ে আমরা এখানে আসি। পরে গাড়ি থেকে নামতেই এক পরিবারের অন্তত ১০ জনের একটি টিম পূর্ব থেকে দাড়ানো একটি মাইক্রো তে উঠে বসতে দেখা গেল জানা গেল তাদের গন্তব্য এবার কক্সবাজারের পাহাড়তলী সেখানে আগে থেকেই আছে তাদের অনেক আত্বীয় স্বজন তারাই এই গাড়ী নিয়ে এসেছেন এবং সেখানে তাৎক্ষনিক নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বার্মার কাপড় খোলে ফেলে স্থানীয় কাপড় পরাতে দেখা গেছে। এভাবে ২/৩ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ৫০০ রোহিঙ্গাকে টেকনাফে ঢুকতে দেখা গেছে।

এ ব্যপারে টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবদুল কুদ্দুস বলেন আমি যেহেতু আমার ব্যবসা বাজারে তাই আমি দেখি সার্বক্ষনিক এখানে রোহিঙ্গাদের আসা যাওয়া। আমার মতে ইদানিং একটু কমেছে আসার ¯্রােত আগে খুব বেশি ছিল। তবে এখনো দৈনিক কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা আসছে বলে ধারনা করছে সবাই। তিনি বলেন এতবেশি রোহিঙ্গার কারনে সমাজে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে পরিবেশ। এখানে সর্বত্র ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে গেছে। আগে এখানে বেশ পর্যটক দেখা গেলেও এখন কোন বাইরের পর্যটক দেখা যায় না।

স্থানীয় সমাজ সেবক এবিএম আবুল হোসেন রাজু বলেন এখনো ভাঙ্গার মুখ, বাহারছড়া এলাকার শাপলাপুর এবং আরো কয়েক টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আসছে। তারা আসার পরে বেশির ভাগই ক্যাম্পে না গিয়ে নিকট আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।

টেকনাফ পৌরসভার মেয়র মোঃ ইসমাঈল বলেন মানবিক কারনে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ও যতটুকু সম্ভব তাদের সহায়তা করার চেস্টা করছি। তবে তারা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকারআহবান জানান তিনি। এ সময় তিনি ও দাবী করেন রোহিঙ্গা আসার ¯্রােত কমছে না এবং এটা কখন শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।