জসিম মাহমুদ, টেকনাফ:

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত কমছে না। দিন দিন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। দলে দলে রোহিঙ্গারা আসছে। শুক্রবার সকাল ৮ টা টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ ঘোলার চর,মাঝের পাড়া, পশ্চিম পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,একের পর এক ট্রলারে করে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আর প্রবেশমুখেই স্থানীয়রা তাদের বাংলাদেশে আসতে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। ট্রলার থেকে নামার পর পরই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ কেউ টাকা দিচ্ছেন,আবার কেউ কেউ তাদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

শাহ পরীর দ্বীপ মাঝের পাড়ায় আসা আমিনা খাতুন (৫০) বলেন,মিয়ানমারে এখনও বর্বর নির্যাতন চলছে। তার স্বামীকে সেখানকার সেনাবাহিনী তার চোখের সামনে হত্যা করেছে। প্রাণভয়ে তিনি চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। বাংলাদেশে আসতে তার তিন দিন লেগেছে।

শাহ পরীর দ্বীপ ভাঙ্গা নামক এলাকায় কথা হয় জরিনা বেগম নামে এক নারীর সাথে। তিন মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তার চোখে-মুখে অনিশ্চয়তার হাতছানি। ফুটফুটে মায়াবী এ শিশুকে নিয়ে তিনি বসে আছেন ফুটপাতে। কোথায় যাবেন কিছুই জানেন না ওই নারী। কাঁদতে কাঁদতে বলেন,এ পৃথিবীতে আমার আর কেউই রইল না। মা-বাবা ও স্বামীকে সেনাবাহিনী গুলি করে মেরেছে। সাত দিন সাগর-জঙ্গল-পাহাড় অতিক্রম করে সন্তানকে বুকে নিয়ে এ দেশে এসেছি। মরিয়ম আর আছিয়া খাতুনের মতো এ রকম- হাজারো মানুষ এখন টেকনাফ-উখিয়া সড়কের দুই ধারে অপেক্ষা করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইয়াবা কারবারীরাই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সর্ব্বোচ সহযোগিতা করছে। রোহিঙ্গা ভর্তি নৌকায় করে ইয়াবা আনার উদ্দেশ্যে মূলত তারা এ কাজ করছেন। এজন্য ইয়াবা সিন্ডিকেটটি আড়ালে থেকে এক শ্রেণির দালাল ও মাঝিদের সহযোগিতায় মাছ ধরার নৌকার আদলে রোহিঙ্গা আনতে মিয়ানমার সীমান্তে নৌকা পাঠাচ্ছে তারা।

শুক্রবার সকাল ৯টায় শাহ পরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফের দিকে আসা রাস্তায় দেখা গেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল। আর রাস্তার দুই পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ সামগ্রীর দোকান। কেউ কেউ সেখান থেকে পলিথিন নিয়ে রাস্তার পাশে মাথা গোজার চেষ্টা করছেন। তবে রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেওয়ার চিত্রও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ট্রাক-পিকআপে করে খাবার ও বস্ত্র নিয়ে এসেছেন। সেসব সহায়তা নিতে রীতিমত ‘যুদ্ধে’লিপ্ত হয়েছেন রোহিঙ্গারা।

সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেন জানা প্রায় মাছ ধরার নৌকায় রোহিঙ্গাদের আনার ব্যবসা চলছে। এসব মাঝির সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেকনাফ থেকে নৌকায় মালয়েশিয়ায় আদম পাচারকারী একটি চক্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাকি দিয়ে তারা এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।

টেকনাফের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখো গেছে- রোহিঙ্গারা যে যেভাবে পারছে আসছে,কিংবা আশ্রয় নিচ্ছে। আবার কেউ অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাকি দিয়ে তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। স্থানীয় লেগুনা চালক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান,রোহিঙ্গাদের আসা কমছে না,আজ আবার বেড়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকী বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মাছ ধরা বন্ধ করা হয়। কিন্তু কিছু অসাধু লোক রোহিঙ্গা পারাপার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাঁকে জানিয়েছেন। অবৈধ পারাপারের অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে নৌকার মাঝি ও দালালদের ।