আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চিকে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের নির্বাসিত আটজন নাগরিক। সু চির উদ্দেশে লেখা আবেগঘন এক খোলা চিঠিতে তাঁরা এই আহ্বান জানান।

চিঠির লেখকেরা বলেছেন, জন্মস্থান মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুঃখ ভাগাভাগি করতে তাঁরা এই চিঠি লিখছেন। চিঠিতে সু চির ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার, জনগণের দুর্দশা এবং জাতি হিসেবে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠির লেখকেরা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের পরিবারের কিছু সদস্য ও বাবারা সু চির প্রয়াত বাবা জেনারেল অং সানের সমকালীন ছিলেন। ছিলেন সহকর্মী। সু চির বাবার মতো তাঁরাও দেশের কল্যাণে অবদান রেখেছেন।

১৯৮৮ সালে সু চির দেওয়া প্রথম বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে লেখকেরা বলেন, জনগণ যত দিন নিপীড়নের শিকার হতে থাকবে, তত দিন কথা বলবেন বলেছিলেন। তাঁর এই সংকল্প ও সাহসিকতায় তাঁরা (লেখকেরা) দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। লেখকেরা বলেছেন, তাঁদের বাবা-মা ও প্রজন্মের কাছ থেকে সু চির জীবন উৎসর্গকারী বাবা যে ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন; লাখো বার্মিজের মতো তাঁরাও তা তাঁকে (সু চি) দিয়েছেন।

সু চির দীর্ঘ গৃহবন্দীর কথা উল্লেখ করে লেখকেরা বলেছেন, ওই সময় তাঁরা তাঁর (সু চি) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সু চির স্বাধীনতা এবং নেতৃত্বের সমর্থনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়তে তাঁরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যথাসাধ্য সবকিছুই করেছিলেন।

সামরিক জান্তার নিপীড়ন বন্ধে সু চির ডাকে রোহিঙ্গাসহ জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাই সাড়া দিয়েছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন লেখকেরা। তাঁরা বলেছেন, সু চি যখন মুক্তি পান, তখন তাঁরা উৎফুল্ল হয়েছিলেন। গণতন্ত্রের লক্ষ্যে সু চি কীভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন, তার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু তিনি তাঁর দক্ষ সমর্থক ও সহযোগী ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাদারি পরামর্শের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখাননি তিনি।

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদ সু চির বিবৃতিতে লেখকেরা মর্মাহত বলে জানিয়েছেন। লেখকেরা সু চির সরকারের গঠন-প্রকৃতিতে উদ্বিগ্ন। তাঁদের মতে, সরকারে এনএলডির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নেই। অভিজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁরা সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তাঁরা সেই গোষ্ঠীর লোক, যাঁরা সু চিকে বন্দী করেছিলেন, যাঁরা গত ৫০ বছর জাতিকে নিপীড়ন করেছেন।

সু চির কাছে লেখকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কোন দিকে যাচ্ছি?’

মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর কি পুরোপুরি ঘুরে গেছে? মিয়ানমার কি স্বৈরতন্ত্রে ফিরে গেছে?, এমন প্রশ্নও তুলেছেন লেখকেরা।
সু চিকে উদ্দেশ করে লেখকেরা বলেছেন, মিয়ানমারে মুক্ত গণমাধ্যম উৎসাহিত করা উচিত। ভিন্ন মতাবলম্বীদের পদ দেওয়া উচিত। নীতি নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। জেনারেলদের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপনের পাশাপাশি দেশের সব জাতি-ধর্মের মধ্য থেকে পরবর্তী প্রজন্মের নেতা গড়া উচিত।

লেখকেরা বলেছেন, তাঁরা জানেন, কাজটা সহজ নয়। কিন্তু সংস্কারের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সু চি একা এই কাজগুলো করবেন, এমন কথা বলছেন না লেখকেরা। শক্তিশালী একটি দলের পক্ষেই এ কাজ করা সম্ভব।

সু চিকে তাঁর বাবার স্মৃতি স্মরণ এবং সরকারে তাঁর অবস্থান উল্লেখ করে লেখকেরা এই নেত্রীকে গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবিক দিক বিবেচনায় একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে। এ বিষয়ে কাজ করতে সু চির নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চিঠির শেষের দিকে সু চিকে উদ্দেশ করে লেখকেরা বলেছেন, তিনি এখনো ক্ষত নিরাময় করতে পারেন। ঐক্যর প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পারেন। মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা হিসেবে এ বিষয়ে সু চির উদ্যোগ আশা করছেন তাঁরা। সু চির মঙ্গল কামনা করে এবং তিনি শান্তির পথে হাঁটবেন— এই প্রত্যাশা জানিয়ে লেখকেরা চিঠি শেষ করেছেন।

চিঠিটি লিখেছেন: কো অং (যুক্তরাজ্য), তুন অং (যুক্তরাষ্ট্র), কিন ওয়ং (অস্ট্রেলিয়া), বিলাল রাসিচিড (যুক্তরাষ্ট্র), ইউ কেয়া উইন (যুক্তরাষ্ট্র), হারান ইয়ানগি (কানাডা), মুং জার্নি (যুক্তরাজ্য) ও মোয়েথি জুন (যুক্তরাষ্ট্র)।

সূত্র: মিজিমি নিউজ