স্মার্টফোন জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে মানবিক সম্পর্কগুলো।ছেলেমেয়েরা কৈশোর বয়সে এলেই মা-বাবা চিন্তায় পড়ে যেতেন। এবার যে কিউপিড এসে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেবে তাঁদের সন্তানের কোমল হৃদয়! ভুল সঙ্গ কিংবা ভুল কাউকে মন সঁপে দিয়ে আজীবন না সে ক্ষত বয়ে চলতে হয় তরুণ-তরুণীদের। অভিভাবকদের সে দুশ্চিন্তার দিন বোধ হয় ফুরিয়ে এল। এ যুগের তরুণ-তরুণেরা যে এখন আর প্রেমে আগ্রহী নন!

এ প্রজন্মের মন-দেওয়ায় এমন আপত্তির কারণ শুনলে অবশ্য মা-বাবার চিন্তা আরও বেড়ে যাবে। ছেলেমেয়েরা যে এখন মোবাইলে সময় কাটাতেই ব্যস্ত, প্রেম করবে কখন? মনগড়া কোনো কথা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপেই এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রফেসর জিন তুয়েঙ্গো এ গবেষণা থেকে একটি বই লিখেছেন। সে বইয়েই জানানো হলো এ তথ্য, ১৯৯৫ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রজন্ম প্রেম করতে আগ্রহী নন। হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনই তাঁদের সঙ্গী।

এ প্রজন্ম এখন বেড়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাঝে। অনলাইনেই ভালো লাগা, পছন্দ, ভালোবাসা জানায় তারা। কিন্তু বাস্তব যখন সামনে, অর্থাৎ ঘরের বাইরে বের হয়ে দেখা করায় বড্ড আপত্তি তাঁদের। ফলে সত্যিকারের অভিসারে যাওয়া কিংবা কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলায় এ প্রজন্ম অনেক পিছিয়ে। প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তুয়েঙ্গো।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালেও বিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেম করার প্রবণতা ছিল উচ্চপর্যায়ের। কিন্তু সেটা এখন কমে এসেছে। ২০১৫ সালে ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীদের ৫৬ শতাংশ প্রেম করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেটা এর আগের প্রজন্মেই ছিল ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি। তুয়েঙ্গো এর পেছনে কারণ হিসেবে বলছেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা এখন বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা কিংবা আড্ডা দেওয়ায় বিশ্বাসী নয়।’ তার চেয়ে ভার্চ্যুয়াল সম্পর্কে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।

তবে অভিভাবকদের জন্য স্বস্তির একটি তথ্যও দিয়েছেন তুয়েঙ্গো। এই অতিমাত্রায় স্মার্টফোন-প্রীতিতে টিনএজারদের মধ্যে এখন যৌন সম্পর্কের হারও কমেছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় বর্তমানে টিনএজারদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কমে গেছে ৪০ শতাংশ।