সিবিএন ডেস্ক:

ছবির রোহিঙ্গা শিশুটি যেন ঘুমিয়ে পড়েছে মায়ের আদরের স্পর্শে। যেন খানিক বাদেই জেগে উঠবে সে, কান্নাকে ভাষা বানিয়ে জানিয়ে দেবে এই পৃথিবী তারও! মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র চিত্রগ্রাহক তার ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেছেন সদ্যজাত শিশুর মরদেহ কিংবা বিপন্ন মানবতার এই আর্তনাদকে। আর ছবি প্রকাশের কিংবা শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতার আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভেঙে সিএনএন-এর মতো প্রধান ধারার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এগুলো প্রকাশ করেছে। সেই ধারাবাহিকতাতেই ছবিগুলো পাঠকের সামনে আনার সিদ্ধান্ত বাংলা ট্রিবিউনের। প্রথাগত ব্যাকরণ ভেঙে এই ছবি প্রকাশের মাধ্যমে পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন এক জনগোষ্ঠীর প্রতি নিজেদের সর্বাত্মক সংহতি প্রকাশ করছি আমরা। জানাচ্ছি আমাদের সর্বোচ্চ সমর্থন।

সাইবার স্পেসের মুক্ত পরিসর এই ছবিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। ছবিটি যেন সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৃত্যুময় বাস্তবতাকে সামনে এনে হাজির করেছে। সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা হামিদা বেগম।
মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে থাকে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুড়তে থাকে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটতে থাকে বাংলাদেশ সীমান্তে। জাতিসংঘের হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। তাদেরই একজন হামিদা।

মৃত সন্তানকে ধরে রোহিঙ্গা নারীর আকুতি দেখে কান্না থামাতে পারছিলেন না বাকিরাওমৃত সন্তানকে ধরে রোহিঙ্গা নারীর আকুতি দেখে কান্না থামাতে পারছিলেন না বাকিরাও

জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে শিশু সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন হামিদা। তবে ছোট নৌকায় অনেক মানুষ ওঠার কারণে প্রায়ই নৌকা ডুবে যায়। কখনও কখনও তাদের মরদেহও পাওয়া যায় না বলে জানান বিজিবির এক কর্মকর্তা। হামিদারও বাস্তবতা একই রকমের। পথে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক বিপদ। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তার একমাস বয়সী সন্তান আব্দুল মাসুদের।
এপির একজন চিত্রগ্রাহক ফ্রেমে বন্দি করেন সকরুণ এই মুহূর্তগুলো। ছবিগুলো এরইমধ্যে জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছে বিশ্ববিবেককে।