কামরুল হাসান:
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জাতি। তবে বার্মার বৌদ্ধ ধর্মালম্বী শাসক গোষ্ঠীরা কখনো তাদের সাধারণ জীবন যাপন করার স্বীকৃতি দেননি। না সামরিক শাসক, না শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত অং সান সুচির শাসক,বাস্তবেই তাদের একমাত্র অপরাধ তারা জাতে মুসলিম!!

এদিকে বৌদ্ধরা মহাগৌরব নিয়ে দাবী করে পৃথিবীতে শান্তির ধর্ম বলতেই আছে শুধু বৌদ্ধ ধর্ম। আর তাদের মহান বানী হচ্ছে- ” জীব হত্যা মহাপাপ।”

কিন্তু সেই মহান বাণীর বলিয়ান হয়ে তারা আজ বিশ্বকে দেখাচ্ছে জঘন্যতম হত্যাকান্ড। যদিও তিব্বতের দালাইলামা বলে গেছেন, “পৃথিবীতে যদি কখনো বৌদ্ধদেব ফিরে আসতো তবে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করত”।

মায়ানমারে নির্বিচারে নারী ধর্ষন, লোম হর্ষক শিশু হত্যা যা শত ভাগ মানাবাধিকার লঙ্গন। আর রোহিঙ্গারা বাঁচার জন্য আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে। প্রাণ বাঁচাতে বর্ষার ঢলের মতো এগিয়ে আসছে সবাই তাদের দু:খের ভার ঘোচাতে। যা বিশ্বের সকল দেশ, দল মত নির্বিশেষে এবং সামর্থ্যবান মানুষদের উচিত পাশে দাড়িয়ে সাহায্য করা।

কিন্তু শুধুমাত্র বাঁচার জন্য সাহায্য করলেই কি দায়িত্ব শেষ? তারা কি বাকি জিন্দেগী শরনার্থী হিসাবে বেঁচে থাকবে? যেখানে থাকবেনা তাদের কোন মৌলিক অধিকার?

বাংলাদেশের শরনার্থী ক্যাম্পে জন্মগ্রহনকারী কোন এক নবজাতক শিশু একদিন যখন কথা বলতে শিখবে, যখন সে দেখবে তার জীবন যাত্রা শুধু মাত্র পাখির খাঁচার বন্দি।

একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তখন তারা তাদের মা বাবার কাছে প্রশ্ন করবে- আমরা বন্দি কেন? আমার দেশ কোথায়? আমার মাতৃভূমি কোথায়? আমার ভাষা কি? আমি শরনার্থী কেন? আমি লেখা পড়া করতে পারছিনা কেন? আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিছুই হতে পারছিনা কেন? আমি সভ্য না কেন? তখন হয়তো তার মা বাবা রূপ কথার গল্পের মত করে তাদের দেশের শাসক বাহিনীর সেই জগন্যতম করুণ ইতিহাস শোনাবে।

ইতিহাস শোনার পর সন্তান যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে পূনরায় জিজ্ঞেস করবে, তোমরা যে বাঁচার জন্য পালিয়ে এসেছিলে কাপুরুষের মত,এতে কি লাভ হল? এখানে তো আমরা জিন্দা লাশের মত বেঁচে আছি! এই স্বাধীনতাহীন বাঁচার কোন অর্থই থাকতে পারেনা! দেশের একজন সু-নাগরিক হিসাবে আমিও তাই বলি জিন্দালাশ বাঁনিয়ে স্বাধীনতাহীন রোহিঙ্গাদের লালন পালন করার চেয়ে আমাদের ভাবা উচিত তাদেরকে বাঁচার মত করে বাঁচতে দেওয়া।

এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। তাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালবাসা কিংবা দেশপ্রেমিক করে গড়ে তোলা। শুধু তাই নয় তাদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে যে, বাঁচতে হলে প্রয়োজনে লড়াই করে বাঁচতে হবে। যেমনি ভাবে আমরা বাঙ্গালিরা ১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষাকে ছিনিয়ে এনেছি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কিংবা ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি।

তাদের বুঝাতে হবে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালীরা অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিল বার্মায়, অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলো ভারতে । কিন্তু কেউ স্থায়ীভাবে শরনার্থী হয়ে থাকেনি। কেউ কেউ স্ব স্ব অবস্থান থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষন নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছে। এবং যারা আশ্রিত ছিল তারাও স্বাধীন হওয়ার পরে দেশে ফিরে এসেছে।

আর যেটি সত্যি কথা সেই যুদ্ধে আমেরিকাসহ আর ও অনেক শক্তিশালী দেশ পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির পক্ষে থাকা স্বত্ত্বেও বাঙালীরা যে, জিতবে কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু আমরা বিশ্বকে হতবাক করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে দেখেয়েছি। ইতিহাস কিছু দিতে পারেনা তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়।

আর সেই বিশাল অর্জন করার কারণ হচ্ছে- আমরা স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম সেদিন। আমরা চাইনি কারো গোলামীর অধীনে থাকতে। আমাদের প্রিয় নেতা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান সাহস যুগিয়েছিলো সেদিন। এই মনোবল এবং দৃঢ় চেতনার বলিয়ানে জয় করেছি বাংলাদেশ।

অন্যদিকে এই রোহিঙ্গারা যারা প্রাণ বাঁচার জন্য নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের চিন্তা চেতনা অন্যরকম ভীরু কাপুরুষের মত। তাদের মনের বাসনা হচ্ছে আজীবন বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসবে,দেশি বিদেশী সাহায্যকারীদের কাছ থেকে খেয়ে খেয়ে বাহু বড় করবে আর ডজন ডজন বাচ্চা পয়দা করবে। বড় বিচিত্র ভাবনা হবে তাদের।

আর্থিক স্বচ্ছলতা যখন থাকবেনা তখন চুরি করবে, ডাকাতি করবে, হাজার টাকায় মানুষ খুন করবে, মাদক ব্যবসায় একাকার হয়ে যাবে, জঙ্গিবাদের উত্তান ঘটাবে শেষ পর্যন্ত আমাদের সোনার সবুজ বাংলাকে করবে কলঙ্কিত। তাই এই মুহুর্তে সকল মানবতাবাদী দেশের উচিত হবে বাংলাদেশের পাশে থেকে তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

পাশাপাশি তাদেরকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করা, তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার জন্য অনুপ্রেরণার যোগান।

প্রয়োজনে মানসিকভাবে বুঝিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহসী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে নিজের মাতৃভূমিতে বসবাস করতে প্রয়োজনে পাঠিয়ে দেওয়া। তাদের বুঝাতে হবে যে, বাধা দিলেই বাধবে লড়াই। রক্ত ছাড়া কখনো স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব আসেনা তা বুঝতে হবে। প্রতিবাদ প্রতিঘাত ছাড়া কখনো সাহস তৈরি হয়না।
অন্যদিকে দেশ রক্ষায় নিজে বাঁচার জন্য যে লড়াই সে লড়াইয়ে মরলে শহিদ বাঁচলে গাজী এবং শহিদদের স্রষ্টা নিশ্চয়ই বেহেস্ত নসীব করবেন। তবে তাদেরকে শুধু এগিয়ে দিলে চলবেনা। বরং সকল মানবতাবাদী দেশ গুলোকে এক হয়ে মুখে মুখে শ্লোগান তুলতে হবে- “চল চল যুদ্ধে চল আরাকান রাজ্য স্বাধীন কর।

অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করছি,দেশরত্ন মানবতাবাদী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করিতেছি, যে কোন মূল্যে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে হবে আবার যে কোন মূল্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে।

তা না হলে যে স্বাধীনতা নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ আজ যে ভাবে উন্নতির ধার প্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছে, এই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ঠিক ততটুকু আবার নামিয়ে দিতে পারে। লুডু খেলার উল্টো পিঠে সাপে খেলে যেমন হয়।

রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে বিজিবি বা আর্মি কতৃক নিবন্ধন করে। উখিয়া টেকনাফের স্কুল কলেজ থেকে ক্যাম্প সরাতে হবে,নাহয় দেশের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ক্ষতি হবে। খেয়াল রাখতে হবে রাখাইনদের মুল ব্যবসা অস্ত্র আর মাদক। শরনার্থী হলেও রোহিঙ্গারা বিষধর সাপের মতো যখন প্রবেশ করেছে এখন গোখরা সাপের মতো বাক্সে ভরিয়ে রাখাই নিরাপদ মনে করছি।

ওরা পর্যটননগরী কক্সবাজারকে পঁচিয়ে দিতে ১৩ মিনিট সময় লাগবে কিন্তু। সেদিকে প্রশাসনের নজর প্রত্যাশা করছি। বেশির ভাগ খবরে ভুয়া ছবি,যেমন মুক্তিযুদ্ধকাল,ইতালি,সিরিয়া,সুদান,ইথিওপিয়া,নাইজেরিয়া,কলম্বিয়ার নির্যাতনের ছবি। যা হোক নির্যাতিত না হলে কেহ জম্মভুমি ত্যাগ করেনা।

সরকার জায়গা দিয়েছে বলে আজ বৃটিশ মিডিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে “The Mother of humanity” উপাধিতে ভূষিত করেছে। তাঁর আর নোবেল পুরস্কারের প্রয়োজন নেই। নোবেল মিয়ানমারে শান্তি আসেনি,শান্তির সূত্র মানবতা সেটা ভুলে গেছে সুচি।

নোবেল জয়ী সুচির পরাজয়,দেশরত্ন শেখ হাসিনার জয়। রোহিঙ্গা নয়, মুসলিম নয়, মনবতার পাশে দাড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন জাতির জনকের কন্যা চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থে ভূষিত, সাউথ সাঊথে অলংকৃত বিশ্ব নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনা।

দেশহীন,গ্রামহীন স্বাধীনতাহীন অভাবী রোহিঙ্গাদের কাজে লাগাতে পারে উৎপেতে থাকা দেশী বিদেশী মহাপাপীরা। আমরা চাই তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্টিত হোক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায়। জয় হোক রোহিঙ্গাদের। জয় হোক আরাকানদের। জয় হোক মানবতাবাদী দেশের। জয় হোক বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের একমাত্র সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমরা শোষক শাসকের পক্ষে নয়, শোষিতের পাশে নির্যাতিত জনতার অধিকারের পাশে।

লেখক: জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ মহেশখালি কক্সবাজার।