একটা মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবার রিটায়ারমেন্ট হবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। যা বেতন পান, তাতে বাড়ি ভাড়া দেবার পর উচ্চমুল্যের এই বাজারে সংসার চালাতে বড় কষ্ট হয়। সংসারটা মূলত চলে বড় ছেলের টিউশনির টাকায়। অনেক ভালো ফলাফল করেও চাকরীর বাজারে তাকে খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। টিউশনির টাকায় চলে না। অনেকটা যেন পা ঢাকতে গেলে মাথা উদোম হয়ে যায়। বাবা বাজার থেকে ফেরেন পলিথিনের ব্যাগে ১-২ কেজি চাল আর ডাল, সামান্য তেল ইত্যাদি নিয়ে, সাথে হয়তো বাসার বাচ্চাটার জন্য একটা চিপসের প্যাকেটও থাকে। বাচ্চাটা পরিবারের ডিভোর্সি মেয়েটার, ধনী পরিবার দেখে বিয়ে দিলেও পরে জানা গেল স্বামীটা ছিল একটা আস্ত বদমাশ। কি আর করা, মেয়েটা ডিভোর্সের পর বাবা-মায়ের সাথেই থাকছে। ছোট ভাইটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি কি বিচিত্র পাথর কঠিন এ সংসার জীবন। হয়তো তার বড় ভাইই তাকে বুঝতে দেয়নি। ঠিক যেমন ছেলেটার ভালোবাসার মানুষটা তাকে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিশাল ফারাকটা বুঝতে না দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করে কখন সে বাদাম নিয়ে আসবে। হ্যাঁ, সামান্য কিন্তু ভালোবাসা মাখা ওই অল্প বাদামটুকুই মেয়েটার কাছে প্রবল প্রার্থিত!

মিজানুর রহমান আরিয়ান এর গল্পে, চিত্রনাট্যে এবং তারই পরিচালনায় এবারের ঈদের টেলিফিল্ম “বড় ছেলে” নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ টেলিফিল্মটি দেখেছেন, গল্পটা তাদের স্পর্শ করেছে, ভাবিয়েছে, অনুভব করিয়েছে, টেলিফিল্মটার দেখার এক পর্যায়ে তারা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছেন, এরপর উচ্ছ্বসিত আবেগাপ্লুত রিভিউ দিইয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র। কি এমন আছে টেলিফিল্মটায় যে এত মানুষকে ছুঁয়ে গেছে এটা? উত্তর খুঁজতেই নাটকটা দেখতে বসেছিলাম। আর তারপরেই উপরে বর্ণনা দেওয়া দৃশ্যপটটা ভেসে উঠলো।

টেলিফিল্মের প্রথমেই যখন একজন প্রৌঢ় বাবাকে বাজারের ব্যাগ ছাড়া সামান্য বাজার নিয়ে ফিরতে দেখলাম, হঠাৎ করেই যেন আব্বুকে দেখলাম। আমার আব্বু, এই এক বছর আগেও ঠিক এভাবেই ক্লান্ত ঘর্মাক্ত কলেবরে সামান্য বাজার নিয়ে ফিরতেন বাসায়, আম্মুর হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন আমার কথা, আমি কোথায়? আম্মু ঠিক এইভাবেই ম্লান হেসে জবাব দিতেন, তুমি প্রত্যেকদিন এই কথাই জিজ্ঞেস করো, ভুলে যাও, না? ছেলেটা এই সময়ে টিউশনি করে। শুনে আব্বু হয়ত খুব ম্লানস্বরে খুব ধীরে ধীরে জবাব দিতেন, টিউশনি তো করছে, কিন্তু একটা চাকরী-বাকরী না পেলে সংসার তো চলছে না। আম্মু তখন, পৃথিবীর আর সব আম্মুর মত ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে যেতেন আমার পাশে, মাথাটা তুলতেও তার বড় সংকোচ হত, কিন্তু ঠিকই বলতেন, ও তো চেষ্টা করছেই, চেষ্টার কি বাকি রেখেছে? তুমি একটু দেখো না প্লিজ, তোমার তো কত জায়গায় পরিচিত আছে…

হঠাৎ করেই টের পেলাম, শুধু আমিই না, বাংলাদেশের প্রতিটা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানই এই দৃশ্যগুলোতে তাদের বাবাকে খুঁজে পেয়েছে, তাদের বাবা, ক্লান্ত-;পরিশ্রান্ত, জীবনযুদ্ধে পরাজিত একজন সৈনিক, সারা জীবন সন্তানের মঙ্গলের আশায় তাদের একটু ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও কি কারণে কেন যেন জীবনের অংকটা ঠিক মেলাতে পারলেন না। অথচ সময় আর খুব বেশি বাকি নেই। একটু পরেই ঘণ্টা দিয়ে দেবে দপ্তরি, সময় শেষ। অথচ সন্তানের ভবিষ্যৎটা নিশ্চিত না হবার দুর্ভাবনাটা নীরবেই পোড়াতে থাকে বাবাকে। আর সবচেয়ে অসহায় মানুষ, মা, বড় যন্ত্রণায় আর আক্ষেপে যেন অনুভব করেন বাবাকে। একটা মধ্যবিত্ত সংসারের ফাউন্ডেশন হিসেবে শত ঝড়-ঝঞ্চা সামলে আর কাঁথার ভেতরে নানা ফুটো আপ্রাণ চেষ্টায় জোড়াতালি দিয়ে নানা ইনোভেশন আর উপায়ে সংসারটাকে কোনক্রমে চালিয়ে নেওয়া একজন মা যেন তার সমস্ত মায়া আর মমতা বাবার অসহায়তাটুকুও মুছে ফেলতে চান। কিন্তু নিষ্ঠুর জীবন সেটা হতে দেয় না।

নিষ্ঠুর জীবন মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশের আর প্রত্যেকটা মধ্যবিত্ত সংসারের মত এখানেও বাবার রিটায়ারমেন্ট হলে প্রতি মাসে মাসে যে বেতনটা পাওয়া যেত, সেট আর পাওয়া যাবে না। পেনশন যদি বহু কষ্টে পাওয়াও যায়, তবুও যৎসামান্য সে টাকায় সংসার চলবে না। এদিকে প্রতিবছরই বাড়ী ভাড়া বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আনুষঙ্গিক খরচও। আর সব বাদ দিলেও প্রতিদিনের বাজারের জন্য যে টাকাটা দরকার, সেটাতেও টান পরে যাচ্ছে নিয়মিত। বড় ছেলেকে উদ্যাস্ত আপ্রাণ খাটছে, কিন্তু তার টিউশনির টাকায় যে আর চলছে না। একটা চাকরী খুব জরুরি!

অবশ্য দুর্মুল্যের এই বাজারে আজকাল টিউশনি পাওয়াও খুব কঠিন। তাই অনেকেই টিউশনি করাতে গিয়ে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় যেন কোনভাবেই কোন কারণে তার টিউশনিটা বাতিল না হয়ে যায়।  সামর্থ্যের চেয়েও বেশি সে ঢেলে দেয় টিউশনিতে পড়াতে গিয়ে, আপ্রাণ চেষ্টা করে একটা ভালো ফলাফল এনে দিতে, তবুও মাঝে মাঝে ভাগ্য তার প্রতি সদয় থাকে না। অনেক গার্জিয়ান হন ফেরেশতার মত, টিউশনি করাতে আসা ছেলেটাকে বা মেয়েটাকে আপন করে নেন তার নিজের আরেক ছেলে বা মেয়ে হিসেবে। কিন্তু অনেকের কপালেই এমন অসাধারণ হয় না। এমনকি এতোটাই বাজে হয় যে মাস শেষে প্রাপ্য টাকাটা দিতে গড়িমসি করে কেউ কেউ। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নিয়ে ভাগ্য এভাবেই খেলা করে।

ওদিকে চাকরীর বাজারে চলে অদ্ভুত সব হিসেব। যেখানে ভালো রেজাল্ট আর রিটেন ভাইবায় টিকে যাওয়াটাই যথেষ্ট না,ছেলেটার চাকুরী পেতে বরং মেলাতে হয় কখনো ঘুষ, কখনো বড় সাহেবের আত্মীয়, কখনো বা আবার “বড় সাহেবের সিলেক্টেড মানুষ” এমন আরো অনেক ইকুয়েশন। যে এই ইকুয়েশন মেলাতে পারে, সে চাকরী পায়। যে পারে না, সে বেকারই থেকে যায়। সেই ইকুয়েশন মেলাতে আসলে বাবার “বহু বছরের পুরোনো ছাত্র” কিংবা “খুব পরিচিত আপনজন”-কেউই সাহায্য করে না ছেলেটাকে। সবচেয়ে যন্ত্রণার হচ্ছে, চাকরীর জন্য বাবার সেই পুরনো ছাত্র বা খুব পরিচিতজন বিন্দুমাত্র সাহায্য না করলেও বাবাকে সে কথা বলা যায় না। কারণ এবারও চাকরীটা হবার সম্ভবনা নেই শোনার পর বাবার সেই শূন্য দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে সবকিছু অর্থহীন লাগে, খুব লজ্জা লাগে, প্রবল গ্লানি এসে ভর করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার উপর, পরিবারের বড় ছেলের উপর…

কিন্তু একজন মানুষ কখনোই ছেলেটার পাশ ছেড়ে যায় না। হতাশও হয় না। হালও ছাড়ে না। বরং সে উচ্চবিত্ত ঘরের কেউ হলেও তার ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো সেটা বুঝতে দেয় না, তার জন্য নিজের হাতে পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে নিয়ে আসে, ছেলেটাকে খাওয়ায়। ছেলেটাকে নানা উপহার দিলেও সে কখনো ছেলেটার কাছ থেকে কিছু নিতে চায় না, স্রেফ প্রতিবার দেখা হবার পর এক প্যাকেট বাদাম ছাড়া। এই বাদামটুকুই তার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

কিন্তু তবুও জীবন তার নিষ্ঠুর রূপটা নিয়ে হাজির হয় আরেকবার। সেই পুরনো গল্পটাই চিত্রায়িত হয়। মেয়েটা বারবার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও মেয়েটার বাবা আর অপেক্ষা করতে চান না। যে সমাপ্তিটা তাদের জানা ছিল বহু আগে থেকেই, শেষ পর্যন্ত সেটারই মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় তারা। জানে কোন সম্ভবনা নেই, তবুও কেন যেন শেষ মুহুর্তেও মেয়েটা ভাবে কোন এক জাদুমন্ত্রবলে ছেলেটার একটা চাকরী হয়ে যাবে। তাদের জীবনটা এভাবে ধূসর আর বিবর্ণ হয়ে যাবে না। কিন্তু না, জীবনটাকে আমরা যেভাবে দেখি, জীবনটা আমাদের সেভাবে দেখে না। তাই সিনেমা-গল্পের মত হঠাৎ ছেলেটার ভাগ্যপরিবর্তনকারী কোন লটারিও লেগে যায় না, আচমকা ছেলেটার একটা চাকরীও হয়ে যায় না। বরং ঘটে সেটাই, যা ঘটবার কথা ছিল, ঘটেছে আগেও, ঘটছে প্রতিনিয়ত। একটা মধ্যবিত্ত বাস্তবতা।

“বড় ছেলে” টেলিফিল্মটার সবচেয়ে অসাধারণ ব্যাপারতি হচ্ছে এখানে কাউকেই খুব বেশি এফোর্ট দিয়ে আলাদা করে কিছু করবার চেষ্টা করতে হয়নি। স্রেফ একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে মিশে যেতে হয়েছে। আরিয়ান অনন্য দক্ষতায় শুধু তুলে এনেছেন একেবারে মেদহীন সাদামাটা একটা মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা, নাটকের বাকি অভিনয়শিল্পীরা চমৎকার অভিনয়ে স্রেফ একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের অংশ হয়ে গেছেন আর অপুর্ব আর মেহজাবিন টেলিফিল্মে সমাজের দুটো আলাদা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করার পরেও ঢুকে গেছেন একটা মধ্যবিত্ত ভালোবাসার দুটো চরিত্রে, তাদের অসামান্য অভিনয়ে অসংখ্য দর্শক কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের আবিষ্কার করেছেন টিভি পর্দার ভেতরে, তাদের মধ্যবিত্ত জীবনের ভেতরে চাপা থাকা অনেক না জানা গল্পকে অভিনীত হতে দেখেছেন পর্দায়, অনেকেই সম্ভবত একটু লজ্জা পেয়েছেন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে, দেখতে দেখতে কিছুটা সংকোচ আর বিস্ময়ে তাদের মনে হয়েছে, আরে, এতো আমি! এতো আমার পরিবার, আমার প্রতিদিনের জীবন, বাস্তবতা!

বাবার সামনে দাঁড়াতে সংকোচ, মানিব্যাগে স্রেফ ১০টাকার দুটো নোট রেখে বাকিটা বাজার আনতে মাকে দিয়ে দেওয়া, মাস শেষ হবার আগেই বাজারের খরচের জন্য মায়ের দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে অনুরোধ আর ছোট ভাইয়ের পিকনিকে যাবার আবদার মেটাতে টিউশনি থেকে অগ্রিম টাকা চাওয়ার মাথা নিচু সংকোচ, লোকাল বাসে ঘামে-দুর্গন্ধে প্রতিদিনের অন্তহীন ক্লান্তি, বেকার জীবনের কঠিন ক্লান্তিকর অভিশাপে মন খুলে হাসতে ভুলে যাওয়া–টেলিফিল্মের এমন প্রত্যেকটা দৃশ্যতেই দর্শকেরা নিজেদের গল্পটা খুঁজে পেয়েছেন, একটা শূন্য ফাঁকা হাহাকার নিয়ে অভিনীত হতে দেখেছেন প্রতিদিনের বাস্তবতাটা। মধ্যবিত্ত জীবন এমন রুঢ় কঠিন বাস্তবতা যে স্রেফ আরেকজন মধ্যবিত্ত ছাড়া তা উপলব্ধি করা খুবই কঠিন। কারণ জীবন নামের চাদরটা ছোট হলো কি বড় হলো, তা নিয়ে নিন্মবিত্তরা কখনো মাথা ঘামায় না, আর উচ্চবিত্তদের মাথা ঘামাতে হয় না। কিন্তু মধ্যবিত্তকে জন্মের পর থেকে মৃত্যুবধি সর্বক্ষণ তটস্থ থাকতে হয় চাদরটা নিয়ে, পা ঢাকতে গেলে মাথা উদোম হয়ে যায়, মাথা ঢাকতে গেলে পা, তবুও তাকে সারাজীবন খেটে যেতে হয় পা আর মাথায় চাদরের ভারসাম্য আনার জন্য। এই নিরন্তর যুদ্ধ একমাত্র একজন মধ্যবিত্ত ছাড়া বোঝা সম্ভব না।

আর কিভাবে কিভাবে যেন এই চাদরের ভারসাম্যটা ঠিক রাখার গুরুদায়িত্ব এসে পরে পরিবারের বড় সন্তানের কাঁধে, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে বড় সন্তানটির চামড়াটা অনেকটা গন্ডারের চামড়ায় পরিণত হতে হয় আমাদের দেশে, করতে হয় অভিনয় প্রতিনিয়ত। স্কুলের সহপাঠীদের সাথে, শিক্ষকদের সাথে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে, এলাকার বন্ধুদের সাথে এমনকি নিজের সাথেও। অভিনয় করতে হয় প্রতিনিয়ত হাসিমুখে ভাল থাকার। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ছোটদের সাহস এবং স্বান্তনা দেয়ার পাশাপাশি, বড়দের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলতে হয় ভাল আছি। বুঝতে দেয়ার কোন উপায় থাকে না, পরিবারের বড় সন্তানটিও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। তারও হয়তো কিছু পাবার ইচ্ছে থাকতে পারে। অনুজদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে গোপনে অশ্রু ফেলে হয়তো বিসর্জন দিতে হয় নিজের সবচেয়ে বড় চাওয়াকে, কিংবা দায়িত্বের ভার বহন করতে করতে এক সময় পরিণত হতে হয় যন্ত্রমানবে। সবার কথা ভাবতে গিয়ে কখন যেন সে নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভুলে যায়, অনেকদিন পর যখন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় হয়, তখন আর সময় থাকে না। ম্লান একটা হাসিতে হঠাৎ করেই সে টের পায়, বহু বছর পেরিয়ে গেছে, জীবনের সূর্যটা ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিকে।

গত ঈদে “বিকেল বেলার পাখি”, এবারের ঈদে “বড় ছেলে” ; বাংলা নাটক-টেলিফিল্মকে এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের জীবনযুদ্ধের বাস্তবতাগুলো তুলে আনতে দেখে বড় ভালো লাগছে। সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর ভাঁড়ামি কিংবা মানহীন একঘেয়ে হালকা নাটক দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া দর্শক তাই এবারের ঈদের অসাধারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজগুলোকে গ্রহণ করেছে সাদরে, এমনই জীবনধর্মী নাটক-টেলিফিল্মই তো হবার কথা ছিল। মেহজাবিনের চমৎকার অভিনয় করেছেন, এমন আরো ভালো কাজ তার অভিনয়কে নতুন মাত্রা দেবে সন্দেহ নেই। অপুর্ব তার অপুর্ব অভিনয়ে দেখিয়ে দিলেন কেন তিনি অপূর্ব! তবে লোকাল বাসে তাকে চড়তে দেখাটা কেমন যেন একটু খাপছাড়া অস্বস্তি লাগলেও এবারের ঈদের বাকি নাটকগুলোর মত অভিনয় দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন পুরোটা। মিফতাহ জামানকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা তার গানটির জন্য, পুরো টেলিফিল্মটা এক সুতোয় বেঁধে রেখেছিল যেন গানটি। সবশেষে এই টেলিফিল্মের জন্মদাতা মিজানুর রহমান আরিয়ানকে ধন্যবাদ একটি অসাধারণ কাজের জন্য, শুভকামনা তার শুরু হতে যাওয়া চলচ্চিত্রের জন্য, আশা করি বাংলা নাটকের মতো বাংলা চলচ্চিত্রেও তিনি এক ঝলক সুস্থ হাওয়া এনে দেবেন! আর আরিয়ানকে ভালোবাসা এই কথাগুলোর জন্য, প্রতিটি মধ্যবিত্ত সন্তানের জন্য বড় সত্য, বড় বাস্তব এই শব্দগুলোঃ

“রাশেদরা চোখের পানি মুছে ফেলে। তারা জানে ঘরের বড় ছেলেকে এভাবে কাঁদতে হয় না, কাঁদতে হয় লুকিয়ে আড়ালে যেন কেউ না দেখে। চোখের পানি মুছে তাদের ঘরে ফিরতে হয় কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, তাদের শক্তি হওয়ার জন্য।”

রাশেদরা ভালো থাকুক… যে রাশেদেরা পরিবারের বাবা-মা-ভাই-বোনগুলোর নির্ভরতা আর ভরসা হয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে চুপচাপ নিজেকে বিসর্জন দিয়ে, প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত!