জাগো নিউজ:

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান, কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দলটির শীর্ষ নেতাদের চীন সফর, প্রতিবেশী ভারতের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সে দেশ সফর এবং যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে এ তৎপরতা লক্ষণীয়।

নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসব দেশ সফর বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা। তারা এমনটিও বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বিষয়টির বাস্তব চিত্র উপস্থাপনপূর্বক মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানই হবে সফরের মূল লক্ষ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) ১২ তারিখ থেকে নিউ ইয়র্কে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশন। ওই অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন ১৬ সেপ্টেম্বর।

সাধারণ অধিবেশন চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

এদিকে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর বেইজিং যাচ্ছে। ১৯ সদস্যের দলটি সেখানে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান। প্রতিনিধি দলে আরও থাকছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম রেজাউল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাপা, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, পারভীন জাহান কল্পনা, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার, মেরিন জাহান, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, উপাধ্যক্ষ রেমণ্ড আরেং ও সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির একটি প্রতিনিধি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করবে। দলটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি দুই দলের সম্পর্কোন্নয়ন ও রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে।

এছাড়া ভারতের ক্ষমতাসীন ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’র আমন্ত্রণে আগামী অক্টোবর মাসে সেই দেশ সফর করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ওই সফরে নেতৃত্ব দিতে পারেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল রোববার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের জাতিসংঘের সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলেছে। রাশিয়াও কথা বলেছে। তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া- এসব চিত্র জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ সভায় বাংলাদেশ তুলে ধরবে।

‘সরকার পরিকল্পিতভাবে সামনে এগোচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকার সারা বিশ্বে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও কথা বলবে’ আশা প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
চীন সফর সম্পর্কে প্রতিনিধি দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা সেখানে যাচ্ছি। সেখানে দুই দলের বিভিন্ন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।

‘তবে দুই দেশের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে’- যোগ করেন তিনি।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সব দেশের কাছেই বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই হিসেবে বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন সরকার আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে চীন ও ভারত সফর।

তিনি বলেন, আসন্ন সফরগুলো থেকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্বের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ের মধ্য নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। গোটা বিশ্ব আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে এগিয়ে গেলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।

‘বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্প উন্নত দেশগুলোর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই দেশের প্রতি বিভিন্ন দেশের আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন দেশে আমাদের আমন্ত্রণ- এ দৃষ্টিভঙ্গিই প্রমাণ করে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত’- যোগ করেন হানিফ।

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানিয়েছি, যাতে দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়। আমরা এটাই আশা করছি।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, এ সফরগুলোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে ভালো, এ সফরগুলোই তার প্রমাণ।

‘নির্বাচন (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা চাইব অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে, এখানে কোনো বিদেশির হস্তক্ষেপ আমাদের কাম্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের সঙ্গে তাদের দলের শীর্ষ নেতাদের আলোচনা হবে। আলোচনায় অবশ্যই দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় প্রাধান্য পাবে।

‘কোনো দলের আমন্ত্রণে গেলে কিছু সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই। এরপরও আমরা সবাই সেখানে বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করব। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প তাতে তাদের (চীন) সম্পৃক্ততা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য হবে’- যোগ করেন ড. শাম্মী আহমেদ।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেহেতু বাংলাদেশ ভিকটিম, সেহেতু আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যাতে তারা মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধানের উপায় বের করেন।