শফিক আজাদ,সীমান্ত থেকে ফিরে :

মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেদেশের যুবককে হত্যা করে লাশ পুড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হোয়াইক্যং লম্বাবিল সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী সিকদারপাড়ার বিধবা জয়নাব আক্তার (২২)।

সে আরো বলেন, আমার স্বামী ও ভাইকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৭দিন পূর্বে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। জীবনের ৪সন্তান নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি। এখন ছেলে সন্তান কি করব? কোথায় যা ভেবে পাচ্ছিনা।

সরেজমিন সীমান্তের বিভিন্ন ঘুরে আশ্রয়ের জন্য দলে দলে ছুটে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের কথা বলে আরো জানা গেছে, ২৫ আগষ্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতা তীব্র আকারে ধারণ করেছে। রোববার সকাল থেকে রাখাইনের আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দেওয়ার পর ওপারের পোয়াখালী,নাইচাডং, সিকদারপাড়া, নাইছাপ্রু, হাতিপাড়া এলাকায় বাড়ী ঘরে আগুণ দেওয়া হয়েছে। আগুণের লেলিহান শিখায় আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। তাঁর তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সহিংসতায় ৫হাজারের অধিক যুবতি ও ৪হাজারের মতো যুবক নিহত হয়েছে। তবে জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুয়াযী সহ¯্রাধিক যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে রাখাইন রাজ্যে।

মিয়ানমারের পোয়াখালী এলাকার হাবিবুল্লাহ (৫০) বলেন, তার ছেলে এরফান (৫)কে হত্যার উদ্দেশ্যে পাহাড় থেকে নিচে নিক্ষেপ করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তাঁর কুমর ভেঙ্গে গেছে। মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন(৩৩) বলেন, অতর্কিত অবস্থায় তাঁদের বাড়ী-ঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন (২৯) ছেলে হাসান (৭) মোঃ ইছা (৫) মেয়ে মাহিদা (২) কে সাথে নিয়ে এদেশে চলে আসে। জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) ও তাঁর ভাই মোঃ নোমান (৪৫) বলেন, তারা স্ত্রী, পুত্র,জায়গা-জমি,গরু,ছাগল, হাঁস, মুরগী ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে। এদের প্রত্যেকের অভিযোগ মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি’র সদস্যরা রাখাইনে যুবক-যুবতি চিহ্নিত করে হত্যা মেতে উঠেছে। বয়োবৃদ্ধদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

উল্লেখ্য যে, সীমান্তের অন্তত ২২টি পয়েন্ট দিয়ে এই অনুপ্রবেশের ভয়াবহ প্রবনতা বেড়ে যায় বলে স্থানীদের দাবী। সীমান্ত পেরিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ হতে উখিয়ার কুতুপালং পর্যন্ত রাস্তার দু,পাশে বনবিভাগের জায়গায় এরা অবস্থান নেয়। বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালী, নতুন গড়ে উঠা বালুখালী ঢালার মুখ,থাইনখালী হাকিম পাড়া, পালংখালী তাজনিরমার খোলা,পালংখালীর বাঘঘোনা বস্তিতে প্রবেশ করছে। অচিন এলাকায় যে যেখানে পারছেন সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিচ্ছেন। ফলে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি। এই ঝুপড়িতে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত ৩লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।