বাংলাট্রিবিউন:
সৈয়দ নূর (২২), মংডুর সাহেববাজার এলাকায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। ২৫ আগস্ট রাতে তাদের বাড়িতে হঠাৎ আগুন দেয় সেনাবাহিনী। আগুনের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ দিয়ে অবিরাম গুলিও চালানো হয়। অধিকাংশই তখন ঘর থেকে বের হতে পারেনি। আগুনে পুড়ে ও সেনাবাহিনীর গুলিতে সেদিন রাতে তার পরিবারের সাতজন মারা যায়। দৌড়ে পালানোর সময় তিনিও গুলিবিদ্ধ হন।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারবিবার ভোরে উখিয়ার বালুখালীর ঢাল পাহাড়ে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদকের কথা হয় তার সঙ্গে। নূরের বর্ণনায় পাওয়া যায় ২৫ আগস্টের সেই ভয়াল রাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার পরিচয়।
নূর হোসেন বলেন, ‘আমি অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করি। সারাদিন কাজ করার পর ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ আগুন, বাইরে থেকে গুলি। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে সবাই, কিন্তু বের হয়ে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়। সেখানে আমার পরিবারের সাতজন মারা গেছে।’

নূরের ভাই আব্বিরিয়া, সৈয়দ, মো. ইউনূচ, ওছি, রামুয়া সবাই গুলিতে মারা যায় ওইদিন রাতে। এছাড়াও তার মা-বাবা মারা যায়। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে বের হয়ে আসেন। তার স্ত্রী হাসেনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘর থেকে যখন আমরা বাচ্চা নিয়ে দৌড় দেই তখন গুলি করে। হাতে গুলি লাগে তারপরও দৌড়ে পালাই।’

নূর হোসেনের সঙ্গে কথা বলার সময় তার পাশেই ছিলেন আরেক নারী রাবেয়া খাতুন। মংডুর বলিবাজার এলাকায় তিনি স্বামী ও পরিবার নিয়েই থাকতেন। স্বামী হারুণ আমিন কৃষি কাজ করতেন। তাকেও ২৫ আগস্ট রাতে গুলি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে, বলে জানান রাবেয়া।

গুলিবিদ্ধ নূররাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা দুই বোন বাচ্চাদের নিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছি। সবাই যেদিকে হাঁটছে সেদিকে হেঁটে হেঁটে বাংলাদেশে আসছি। নদী, পাহাড় সব পার হয়ে চলে আসছি।’ রাবেয়ার বোন মাবিয়া খাতুন। তিনিও বলিবাজার এলাকায় থাকতেন। তার স্বামীর নাম নজরুল ইসলাম। তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

নুরুল আমিন (৩২)। মিয়ানমারের মংডুর বলিবাজারের তুলাতলী এলাকায় থাকতেন। তার তিন সন্তান, স্ত্রী রমিজা খাতুন মারা গেছেন। তিনি একা বাংলাদেশে আসছেন।

রাখাইন রাজ্যের বুচিদং এলাকার একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মো. রাশেদ (২৬)। গত ৬ সেপ্টেম্বর লম্বাবিল সীমান্ত দিয়ে টেকনাফে প্রবেশ করেন। বর্তমানে উনচি প্রাং নতুন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গুলিও করেছে। এতে অনেক মানুষ মারা গেছে। মানুষ যখন দৌড়ায় তখন সেনাবাহিনী গুলি করতে থাকে। আর কাছে পেলে হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে জবাই করে অথবা বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত ২৫ অক্টোবর থেকে রাখাইনে গণহত্যা শুরু করলে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা শুরু করে রোহিঙ্গারা। এর আগে গত ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।