সিবিএন ডেস্ক:
ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিংয়ের ডেরার দপ্তরে শনিবারও হানা দিয়েছে হরিয়ানা পুলিশ। মাটি ফুঁড়ে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে তাতে খুব একটা বিচলিত নন গুরমিত রাম রহিম। বরং নিজের নিরাপত্তার নিয়েই বেশি চিন্তিত। জেলবন্দী কুখ্যাত অপরাধীরা যদি তাকে মেরে ফেলে!‌ এই ভয়েই দিন কাটছে তার। তাই বলে কয়ে রোহতকের সুনারিয়া জেলে নিজের জন্য ১৫–২০ জন নিরাপত্তারক্ষী আদায় করে নিয়েছেন তিনি। তাতে খাপ্পা অন্য বন্দীরা। শুক্রবার জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছে সোনু পণ্ডিত।

সে জানিয়েছে, ‘‌অন্য বন্দীরা বাবার ওপর এমনিতেই চটে। পারলে দু’‌এক ঘা বসিয়ে দেয়। তাতে ভয় পেয়েছেন রাম রহিম। তাই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে সমস্যা আরো বেড়েছে। উনি জেলে আসার পর বাকি বন্দীদের ওপর হাজারো নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। তাই সকলে ওর ওপর খুব বিরক্ত।’‌
তবে জেলের মধ্যে বাবা যে বহাল তবিয়তেই আছেন তা নিশ্চিত করেছে পণ্ডিত। সে জানিয়েছে, ‘‌কয়েদিদের পোশাক গায়ে চড়াননি রাম রহিম। নিজের সাদা পোশাক পরেই থাকেন। এমনকী কোনো কাজও করেন না। দিন প্রতি ৪০ রুপির মজুরিতে গাছপালা পরিচর্যার কাজ পেয়েছেন বলে দিন কয়েক আগে খবর রটেছিল বটে। তা একেবারেই ঝুটো।’‌
জেলবন্দী অন্য ধর্ষকদের তুলনায় তাকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সোনু পণ্ডিত। জেলে রাম রহিমের পাশের কুঠুরিতেই ছিলেন দলিত সমাজকর্মী স্বদেশ কিরাদ। ছাড়া পেয়ে দিন কয়েক আগে তিনিও একই কথা বলেছিলেন। এমনকী বাবা কান্নাকাটি করছেন বলেও দাবি করেছিলেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, রোহতকের ডেপুটি কমিশনার অতুল কুমার। তার দাবি, ‘‌তিহারের তুলনায় সুনারিয়া জেলের ব্যবস্থাপনে ঢের ভালো। রাম রহিমের জন্য বাকিদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, প্রতি নিয়ত সেই চেষ্টা চলছে।’‌
তবে জেল চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় আঁটোসাটো করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেল কর্তৃপক্ষক্ষের আবেদনে জেলের ওপর দিয়ে যাবতীয় ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলের মধ্যে মোবাইল জ্যামারের বন্দোবস্ত করতেও ডিজির কাছে আবেদন পৌঁছেছে। রাম রহিমকে এখনই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তাই জেল চত্বরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি রাখা হয়েছে।

মহিলা হোস্টেল পর্যন্ত সাধুবাবার গোপন সুড়ঙ্গ!
মহিলা হোস্টেল পর্যন্ত সাধুবাবার গোপন সুড়ঙ্গ!মহিলা হোস্টেল পর্যন্ত সাধুবাবার গোপন সুড়ঙ্গ!
ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিমের ব্যক্তিগত আবাস থেকে সুড়ঙ্গটা চলে গেছে সোজা মহিলা হোস্টেল তথা সাধ্বী নিবাসের দিকে। বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। এই গোপন পথের সন্ধান মিলল সিরসার ডেরায়। এটা ছাড়াও, আর একটা সুড়ঙ্গের খোঁজ পেয়েছে তল্লশি চালানো টিম। হরিয়ানা সরকারের মুখপাত্র সতীশ মিশ্র জানিয়েছেন, “আমরা জানলার মতো চৌকোনা একটা সুরঙ্গপথ পেয়েছি যেটা ডেরা আবাস থেকে সাধ্বী নিবাস পর্যন্ত গিয়েছে।” দ্বিতীয় সুড়ঙ্গটা ডেরার ভিতর থেকে শুরু হয়ে পাঁচ কিলোমিটার বাইরে গিয়ে শেষ হয়েছে। এটা পুরোটাই মাটির। সম্ভবত দরকারে পালানোর পথ হিসেবেই এটা তৈরি রাখা হয়েছিল, মনে করছে ভারতীয় পুলিশ।
শনিবার ছিল সিরসার ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতরে পুলিশি তল্লাশির দ্বিতীয় দিন। এ দিনের তল্লাশিতে আস্ত একটি বিস্ফোরক কারখানার খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ৮০ কার্টুনের বেশি বিস্ফোরক। তল্লাশি অভিযান শুরুর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই খোঁজ মেলে কারখানাটির। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এখানে বহু দিন ধরে তৈরি করা হত বিস্ফোরক। কারখানাটি সিল করে দেয়া হয়েছে। তদন্তের কাজে লাগানো হয়েছে রুরকি থেকে আসা ফরেন্সিক দলকে। বিস্ফোরকের প্রকৃতি এবং তা কতটা শক্তিশালী সে সব পরীক্ষা করা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, কারখানায় তৈরি বিস্ফোরক বাইরে বিক্রি করা হত কি না, সে বিষয়টিরও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জোড়া ধর্ষণ কাণ্ডে ‘রকস্টার বাবা’ গুরমিত রাম রহিম সিংহ জেলে যাওয়ার পর থেকেই সিরসায় ডেরার সদর দফতরে হানা দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে ৭০০ একরের ডেরা চত্বরে তল্লাশি গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে। তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ এবং সরকারি নানা বিভাগের ১০টি দল। রয়েছে ৪১ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী, ফরেন্সিক দলও। পুরো বিষয়টি ভিডিও করে রাখতে লাগানো হয়েছে ৬০টিরও বেশি ক্যামেরা।
প্রথম দিনের তল্লাশিতে মিলেছিল ১ রুপির নীল, ১০ টাকার কমলা রঙের প্লাস্টিকের কয়েন। মিলেছে ১২০০টা নতুন নোট। বাতিল পাঁচ শ’-হাজারের ৭০০০টা নোট। পাওয়া গেছে ১৫০০ জোড়া জুতো, ৩ হাজারেরও বেশি ডিজাইনার জামাকাপড়! বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অজস্র ল্যাপটপ, হার্ড ড্রাইভ। ডেরার সদর দফতরে বহু লাশ পোঁতা রয়েছে বলেও খবর মিলেছে। সে জন্য ইতিমধ্যেই জেসিবি মেশিন এনে মাটি খোঁড়া শুরু করেছে পুলিশ।
নিরাপত্তার খাতিরে এ দিনও তল্লাশির সময়ে জেলায় মোতায়েন রয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। গতকালের মতো এ দিনও ডেরা সদর দফতরের বাইরে রয়েছে ডগ স্কোয়াড। রয়েছে বম্ব স্কোয়াড, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্সও।
‘পাপা কি পরি’ হানিপ্রীতের প্রাণ সংশয়?
নিজেকে তিনি ব্যাখ্যা করতেন ‘পাপা কি পরি’ হিসেবে। রাম রহিমের পর তারই ডেরার মাথায় বসার কথা। সেই হানিপ্রীত ইনসান এখন নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজেদেরই সমর্থকদের ভয়ে। তাকে খুনের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে খবর।
রাম রহিমহানিপ্রীত নাকি ডেরা সাচা সৌদার গোপন কাজকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতেন। জানতেন ডেরা প্রধান রাম রহিম গুরমিত সিংহের সম্পর্কেও। পুলিশের কাছে মুখ খুললে ফাঁস হয়ে যেতে পারে অনেক গোপন তথ্য। তাই তার প্রাণ সংশয় হয়েছে।
হানিপ্রীতকে শেষ দেখা যায় ২৫ অগাস্ট, রোহতকে। রাম রহিমের সঙ্গে জেলে দেখা করার অনুমতি চাইছিলেন তিনি। অনুমতি না মেলার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, রোহতকে কোনো অনুগামীর বাড়ি লুকিয়ে রয়েছেন, এখন খবর, গা ঢাকা দিয়েছেন নেপালে।
হরিয়ানা পুলিশ তার নামে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে। কিন্তু এখনো হানিপ্রীতের কোনো খোঁজ নেই।
হানিপ্রীতের অবর্তমানে ডেরার প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর রাম রহিমের আর এক ঘনিষ্ঠ বিপাসনার। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, ডেরার কর্তাব্যক্তিদের শিগগিরই গ্রেফতার করবে তারা।
হানিপ্রীতের সঙ্গে রাম রহিমের অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ। তাই তার গ্রেফতারি আলো ফেলতে পারে ডেরার কিছু অন্ধকার, গোপন দিকে।