মাহাবুবুর রহমান:

কক্সবাজার পৌরএলাকা সহ শহরতলীর আশপাশে অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পূর্ব পরিচিত বা নিকট আত্বীয় স্বজনের কাছে স্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে স্থানীয়দের দাবী গনহারে রাতে দিনে গাড়ী করে রোহিঙ্গার ¯্রােত আসছেই এটা কোন ভাবে থামানো যাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন নগরী কক্সবাজরের পরিবেশ ভারী হয়ে যাবে। তাই সচেতন মহলের জোর দাবী দ্রুত এসব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে এক জায়গায় রাখা হওক। এদিকে কক্সবাজারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অনুপ্রবেশকারী সব রোহিঙ্গাকে বালুখালী নিয়ে গিয়ে একটি ছবি সহ তালিকা করার উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে। আর পুলিশ সুপার বলছে কক্সবাজারের সব মানুষকে এই সমস্যা সমাধানে এক সাথে কাজ করতে হবে।

মায়ানমার খুইন্যা পাড়ার বাসিন্দা ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ শফি স্বপরিবারে এখন আছে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের শাহ নূর পাড়ায়, তার সাথে অন্তত ৪০ জনের একটি বড় কাফেলা যারা সবাই কয়েক দিন আগে মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। একই সাথে বদু, ছৈয়দা, আলী মিয়া সহ অনেক রোহিঙ্গা স্বপরিবারে এই এলাকার আশপাশে অবস্থান করছেন। তারা ইতি মধ্যে স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে নানান কাজের সন্ধানে ঘুরছেন। এই এলাকা থেকে বের হয়ে ৮ বছর আগে মায়ানমার থেকে আসা রাবেয়াদের বাড়ি আছে আরো ১৫ জনের একটি রোহিঙ্গা দল, যারা সবাই রাবেয়ার ভাই বোন সহ আত্বীয় স্বজন, আলাপ কালে মরিয়ম, শুক্কর সহ কয়েক জন রোহিঙ্গা জানান তারা আর কখনো মায়ানমারে ফিরে যেতে চায় না। এখানেই স্থায়ী ভাবে থাকতে চায়। বর্তমান রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে এখানে কেন আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন আমাদের আত্বীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করলে তারাই এখানে চলে আসতে বলেছে তাই এখানে চলে আসছি। শুক্করের দাবী তাদের সাথে এক গাড়ীতে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা এবং গত কয়েক দিনে এই এলাকায় ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে। সবাই এখন নিকট আত্বীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে আছে।

এ ব্যপারে বৃহত্তর পাহাড়তলী সমাজ কমিঠির সভাপতি আবুদল হক বলেন এখন রোহিঙ্গাদের পদচারনা অনেক বেড়ে গেছে আগে কেউ আসলে গুপনে থাকতো, কিছুদিন পরে ঘর থেকে বের হতো কিন্তু এখন বীরদর্পে সবাই হাটাচলা করছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা দরকার। তিনি বলেন বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকার নুতন বাজার, জিয়া নগর,বাদশাঘোনা, মৌলবী পাড়া, ফাতের ঘোনা, আবদুল্লাহর ঘোনা, ইসলামপুর, অল্লা ঘোনা, আবু উকিলের ঘোনা,শাহ নূর পাড়া,বাচা মিয়ার ঘোনা, আদর্শ গ্রাম, টেকনাফ পাহাড় এলাকা, হালিমা পাড়া, নুরু সওদাগরের ঘোনা,সত্তর ঘোনা, সিরাজের ঘোনা, নজির হোসেনের ঘোনা,পল্লাইন্য কাটা, সমিতি ঘোনা এলাকায় কমপক্ষে ২০ হাজার বা তারো বেশি রোহিঙ্গা এসেছে। যারা বেশির ভাগই বিভিন্ন বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় সমাজ কমিঠির সাধারণ সম্পাদক সব্বির আহাম্মদ বলেন রোহিঙ্গার এবারের আসার ¯্রােত অতীতের সকল রেকর্ট ভ্গং করেছে। আগে কোন সময় এভাবে ট্রাকে ট্রাকে মানুষ আসতো না। আমরা এলাকা বাসীর পক্ষ থেকে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা করছি কার বাসায় কয়জন আছে তার একটি খসড়া তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি যাতে প্রশাসন চাইলে সহায়তা করতে পারি। পাহাড়তলীর বাসিন্দা আইনজীবি সহকারী মনিরুল আলম বলেন বাজারে বের হওয়া যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের কারনে, এত বেশি পরিমান রোহিঙ্গা আগে কখনো দেখিনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা করবে কি, খাবে কি ? কিছুদিন পরে তাদের নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা হয়ে পড়বে। দ্রুত এসব বিষয়ে একটি কার্যকর সিন্ধান্ত নেওয়া দরকার।

এদিকে কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায়ও ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলার আকতার কামাল। তিনি বলেন গত কয়েক দিনে এখানে প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে, তারা তাদের পূর্ব পরিচিত এবং নিকট আত্বীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে আছে। আমি ইতি মধ্যে মসজিদে এবং এবং এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দিয়েছি কোন ভাড়া বাসায় যেন রোহিঙ্গাদের ভাড়া দেওয়া না হয়। জেলা প্রশাসক সাহেবের নির্দেশে তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার জন্য উদ্ভোদ্ধ করেছি। এর মধ্যে অনেকে ফিরে গেছে তবে বেশির ভাগই ফেরত যায় নি। তাই এ বিষয়ে একটি দ্রত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এদিকে টেকপাড়া, বাহারছড়াও এলাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে, স্থানীয়দের দাবী এখানে কিছু মানুষ আছে যারা আগে রোহিঙ্গা মেয়ে বিয়ে করেছে বা মেয়েরা রোহিঙ্গা ছেলে বিয়ে করেছে তারাদের আত্বীয় স্বজনদের বাড়িতে এনে আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়া শহরের রুমালিয়ারছড়া,পেতা সওদাগর পাড়া,এসএম পাড়া, নুনিয়ারছড়া পেশকার পাড়া, লাইট হাউজ সমিতি পাড়া, সহ সব এলাকায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এসেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, পিএমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আবদু রহিম বলেন আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাচ্ছি আমাদের এলাকায় ইতি মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে, আসলে সরকারি ভাবে তাদের আসতে দিচ্ছে বলে এলাকার মানুষ ও কিছু বলছে না। তবে এটা আমাদের এলাকার নিরাপত্তা, বা পরিবেশের জন্য খুবই খারাপ হবে। রোহিঙ্গা বিষয়ে দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে একটি সিন্ধান্ত আসা দরকার।

এব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন আমরা শুনতে পাচ্ছি কক্সবাজার শহরতলী সহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ এসব রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় সে বিসয়ে জানতে চাইছে কিন্তু আমি কোন উত্তর দিতে পারছি না।

এ ব্যপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যােিজস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন আমরা সব রোহিঙ্গাকে বালুখালীতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। এবং সবাইকে বিছিন্ন ভাবে না থেকে সব রোহিঙ্গাকে বালুখালীতে এসে নাম নিবন্ধনের জন্যও তিনি আহবান জানান। সেখানে সবার ছবি সহ নাম নিবন্ধনের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইবকাল হোসেন বলেন রোহিঙ্গা সমস্যা পুলিশেরএকার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না, এ ব্যপারে কক্সবাজারের মানুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।