শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার :
মিয়ানমারে গণহত্যা শিকার বিশ্বের সবচাইতে নির্যাতিত নিপীড়িত ও রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মানবাধিকার দূত হয়ে কক্সবাজার এসে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে গেলেন মুলিম বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র তুরস্কেরে প্রেসিডেন্ট এরদোগান পত্মী ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান। এতে করে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়েছে এবং গোটা বিশ্ব সোচ্চার হচ্ছে মিয়ানমারের গণহত্যার বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গারাও মনে করছেন তারা একেবারে অভিভাবকহীন নয়।
গত বৃহষ্পতিবার ৮ সেপ্টেম্বর তুর্কি ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্যাতিত নারী-শিশুদের জড়িয়ে ধরে নিজে কাঁদলেন এবং সবাইকে কাঁদিয়ে যেন শিক্ষা দিলেন নির্বোধ মুসলিম শাসকদের। বিশ্বের রক্তচোষা দানব নেতাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দিয়ে গেলেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান’।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের গনহত্যার শিকার লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ আজ দেশ হীন, আশ্রয়হীন। মিয়ানমারের বর্ববর সেনা-পুলিশের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে নির্বিচারে হত্যা, গুম, ধর্ষন ও জঘন্যতম নির্যাতনে বিপর্যস্ত আজ আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। পালিয়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে, বনে জঙ্গলে, রাস্তা-ঘাটে ও বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে আশ্র নেয়া এসব রোহিঙ্গারা এখন প্রকট খাদ্য সঙ্কটে। বিবেকের তাড়নায়, ৯ ঘণ্টা বিমান জার্নি করে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে এসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এরদোগান পত্মী ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান।
নিজস্ব বিমানে করে রাত তিন টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ল্যান্ড করে, রেস্ট নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সকালের নাস্তা সেরেই ছুটে যান প্রাইভেট বিমানে করে রোহিঙ্গা অধ্যুসিত কক্সবাজারে। কক্সবাজার নেমেই ছুটে যান তাঁর প্রিয় মানুষগুলার খোঁজ খবর নিতে ও তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ।
নিদ্রাহীন তাঁর চোখে মূখে একটুকুও দেখা যায়নি বিরক্তি ও ক্লান্তির ছাপ। শরীরকে দেননি একটু ও বিশ্রাম তারপরও থেমে থাকেননি তিনি সকাল থেকে বিকাল অবদি। সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অচেনা মানুষগুলাকে আপন করে নিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই, নির্যাতিত মানুষগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার পরম চাদরে ঢেকে ফুফিয়ে কেঁদেছিলেন তিনি। শুনেছে তাদের উপর ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম বর্বরতার কথা। এই নির্মমতার কথা শুনে নিজে কেঁদেছেন শুধু নয়, কাঁদিয়েছেন উপস্থিত সবাইকেও।
নিজ হাতে খাদ্য তুলে দিয়েছেন অভুক্তদেরকে, হাঁসপাতালে ছুটে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন নির্যাতিত অসুস্থ মানুষগুলার। প্রায় ৫ হাজার মাইল দূর থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছেন ১০০০ টন ত্রান সামগ্রী, যা বিলিয়ে দেওয়া হবে রোহিঙ্গা শরনার্থিদের মাঝে।
তুরস্কের ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বলেছেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি তুরস্কের হাত প্রসারিত থাকবে। তুরস্ক রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে তুরস্ক মিয়ানমারে এই গনহত্যা বন্ধে ও রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জানান। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আরাকানের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান তুরস্কের ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান।
বাস্তবেই বলাযায় মুসলিম বিশ্বের সৎ সাহসী ও মুসলিম দরদী, মানব দরদী তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসিপ তায়েপ এরদোগানের যোগ্য পত্মী মানব দরদী, মানবাধিকার দূত ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান।
শুরু থেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা ও নিষ্ঠু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তিনি সিরিয়া ও কাতার এবং মিয়ানমারের আরাকানের নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাড়িঁয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশ গুলোকে থমকে দিয়েছেন। চমকে দিয়েছেন বিশ্বের মানবাধিকার ফেরিওয়ালাদের। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তাঁর পত্মী ফাস্ট লেডি এমনি এরদোগান দেখিয়েছেন যা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলিম নেতাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমান করে দেখাতে পারেনি। এই ভূমিকার মাধ্যমে এরদোগানকে মুসলিম বিশ্ব এখন আরেক সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী বলেই আখ্যাইত করছেন।
একইভাবে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তুরস্কের একটি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে মিয়ানমার পৌঁছেছে বলেও জানাগেছে। বৃহস্পতিবার তুর্কি কোঅপারেশন এন্ড কোঅর্ডিনেশন এজেন্সির বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণের ব্রিটিশ সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটর। বুধবার এক হাজার টন চাল, শুকনা মাছ ও কাপড় দিয়ে মিয়ানমারে পৌঁছায় জাহাজটি। রাখাইন রাজ্যের সোশ্যাল সার্ভিস মন্ত্রণালয়কে এই ত্রাণগুলো তুলে দেয় তারা।
এরদোগান পত্মীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে বেলাল এরদোগান, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কেভুসেগলু, পরিবার ও সামাজিক কল্যাণ মন্ত্রী ফাতেমা বেতুল, ক্ষমতাসীন জাস্টিস ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির ইস্তাম্বুল শাখার ডেপুটি রাজভা কাভাকি খান, তুর্কি রাষ্ট্রীয় সাহায্য-সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান টিকার প্রেসিডেন্ট সারদার ক্যাম, তুর্কি রেড ক্রিসেন্ট পরিচালক ইব্রাহীম আলটান প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকাস্থ তুর্কি দূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগান। তিনি একে ‘গণহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে ফোন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তার অঙ্গীকার করেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন।
টানা দেড় ঘণ্টার এই পরিদর্শন শেষে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক বরাবর বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এসময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু বলেন, রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে সেজন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। তুরস্ক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে তারা বিকাল ৩টার দিকে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে যান।#