সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :

মায়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আজ বিকাল তিনটায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে ঢাকা র‍্যালি নামে নাগরিক র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালির পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে মায়ানমারের নিরীহ রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাদের শিশুদের লাশ ভাসছে বঙ্গোপসাগরে, তারপরও কারো কোন সাড়া শব্দ নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন কথা নেই।
যারা সারা বিশ্বে মানবাধিকারের ধুয়া তুলে বিভিন্ন সময় নানা সবক দেয়, আজকে আমরা দেখছি তারা নিশ্চুপ, তাদের কোনো শব্দ নেই। অথচ জাতিসংঘের universal declaration of human rights অর্থাৎ জাতিসংঘের যে মানবাধিকার সনদ রয়েছে তাতে তারাও তো স্বাক্ষর করেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশ এ বিষয়টিও জাতিসংঘে উত্থাপন করা উচিত, কেননা মানবাধিকার সনদের স্বাক্ষর করা কোন দেশ এভাবে গণহত্যাকারীদের সমর্থন জানাতে পারে না।
আজকে বাংলাদেশের দুইটি দায়িত্ব, মানবাধিকার এবং জাতীয় নিরাপত্তা। দুটিই বাংলাদেশ জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সাথে মানবাধিকারের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সাথে আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের উপর মানবাধিকার রক্ষার প্রধান দায়িত্ব বর্তায় এ কারণে যে, আমাদের সরকার এবং আমাদের জনগণই প্রত্যক্ষদর্শী কীভাবে গণহত্যা সংগঠিত হচ্ছে। সুতরাং যখন বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ যখন এই গণহত্যার বর্ণনা দিতে যাবে তখন কিন্তু বিশ্ববাসী বুঝতে পারবে আসলেই এখানে কি ঘটছে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেই কথা গুলো বলবার অধিকার আমাদের রয়েছে।
যখনই একটি সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর উপর নিপীড়নের বিরোধিতা করা হয়, তখনই কেউ কেউ সাম্প্রদায়িকতার কথা বলছেন। গণজাগরণ মঞ্চ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের অধিকারের কথা বলে এসেছে। এখন রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলায় যারা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন তুলছেন, আমি মনে করি তাদের মনের মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প রয়ে গেছে। সুতরাং আজকে রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীর ওপর যে ভয়াবহ নিপীড়ন চলছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত।
আজকে সারা বিশ্বে মানবিক মানুষের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আজকে যখন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে, কোন সুস্থ মানুষের এই সময়ে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না।
আজকে রোহিঙ্গাদের পাশে মানবতার প্রশ্নে যেমন আমাদের দাঁড়াতে হবে, তেমনি তারা যেন পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে নিরাপদ ভাবে তাদের মাতৃভূমিতে থাকতে পারে, সেই অধিকার তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী তাদের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের জন্য যে লড়াই করবে তাতে বাংলাদেশের আপামর মানবিক জনগণ সমর্থন জানাবে। আমরাও আমাদের নিজেদের মর্যাদা ও অধিকার আদায় করার জন্য লড়াই করা একটি জাতি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণাপত্র, সেখানেও পরিষ্কার বলা আছে আমরা কেন মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আজকে যখন একটি জাতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, তাদেরকে নৈতিক সমর্থন দেওয়া আমাদের কর্তব্য। সেই জায়গা থেকে আজকে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমি আহ্বান জানাই, দেশব্যাপী দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকে স্ব স্ব জায়গা থেকে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। গণহত্যার খবর ছড়িয়ে দিন। সারা বিশ্বে জনমত তৈরি করে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ভূমিতে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেন আমরা ভূমিকা রাখে পারি তার জন্য আমাদের সবাইকেই সচেতন এবং সজাগ থাকতে হবে।”
উপস্থিত জনতা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন এবং স্লোগানের মাধ্যমে বার্মা সরকারের চালানো নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদ করেন। নাগরিক র‍্যালিটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে বাংলামোটর ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগে ফিরে আসে।
তারপর রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন,”আজকের এই নাগরিক র‍্যালিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমরা সমবেত হয়েছি। আমরা দেখছি যে, এই গণহত্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। আমরা ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখছি, কীভাবে মানুষের ঘর বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখেছি কিভাবে মানুষ নদী সাগর ডিঙিয়ে বেঁচে থাকার আশায় বাংলাদেশের সীমান্তে ভিড় করছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের হিসেবেই কয়েক লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে।
এই নিপীড়ন যারা করছে, সেই বার্মার শাসক একজন নোবেল বিজয়ী। তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এটা নোবেল কমিটির জন্য যেমন লজ্জা, তেমনি সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য লজ্জা, মানবতার জন্য লজ্জা। একজন গণহত্যাকারী, যে কিনা নির্বিচারে শিশু হত্যা করছে, মানুষ হত্যা করছে, তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে!
আমরা নোবেল কমিটির কাছে আহ্বান জানাই, যেন তার এই নোবেল শান্তি পুরষ্কার, যেটি অশান্তি তৈরি করছে, তা অবিলম্বে স্থগিত করা হোক।
আজকের এই ঢাকা র‍্যালি থেকে আমরা ঘোষণা করছি, যদি তিন দিনের মধ্যে বার্মা সরকার তার দেশে চালানো গণহত্যা বন্ধ না করে এবং তার নাগরিকদের ফেরত না নেয়, তাহলে আগামী ১১ তারিখে সোমবার আমরা মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করব।
আমরা সারাদেশের সকল মানুষকে আহ্বান জানাই, আসুন আমরা বার্মা দূতাবাস ঘেরাও করে তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেই যে, বাংলাদেশের মানুষ এই গণহত্যা মেনে নেবে না। আগামী ১১ তারিখ, সোমবার, বিকাল তিনটায় গুলশান ২ নাম্বার চত্বর থেকে আমরা বার্মা দূতাবাস অভিমুখে রওনা দেবো।”