মোঃ আশেকউল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ :

পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশকে মুছে ফেলে তদস্থলে রাখাইন (মগ) রাজ্যে পরিনত করার উদ্দেশ্যে সে দেশের সামরিক জান্তা, সীমান্ত রক্ষী বিজিপি এবং উগ্রপন্থি রাখাইন মগ যৌথভাবে আরাকানের সংখ্যা গরিষ্ঠ রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন মাত্রা অব্যাহত রেখেছে। একের পর এক হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশু হত্যা ও বাড়ী-ঘরে পেট্টোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলে, অবশেষে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানেরা মাতৃভূমি আরাকানের জীবনের মায়ামমতা ত্যাগ করে পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকার নাফ-নদী ও সাগর পথে ট্রলারযোগে দলে দলে অনুপ্রবেশ ঘটছে। গত ১১ দিনে প্রায় ২লাখের চেয়ে বেশী রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু অনুপ্রবেশ ঘটেছে, বলে একাদিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং কাঞ্জর পাড়া সদর ইউনিয়নের লম্বরী, সাবরাং মুন্ডর ডেইল, খুরের মূখ ও বাহারছড়া শামলাপুরসহ নাফ নদী ও সাগর উপকূল দিয়ে ট্রলার যোগে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে জানান, একতো সামরিক জান্তার নির্যাতন এবং এখানে আশ্রয় নিতে এসে আর্থিক নির্যাতন চলছে সমানতালে। এসব দৃশ্য দেখে তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর চলছে, মরার উপর খাঁরা। টেকনাফ সীমান্ত এলাকার তালিকাভূক্ত মানব পাচারকারীচক্র নাফ নদী ও সাগর পথে রোহিঙ্গাদের এদেশে অনুপ্রবেশ করতে অসংখ্যা ট্রলার নিয়োজিত করে রেখেছে। মংডু শহর থেকে প্রায় ৪ কিঃ মিঃ দক্ষিণ সাগর উপকূল নাইক্ষ্যংদ্বীয়া থেকে ট্রলার যোগে রোহিঙ্গাদের সাগর পথে নিয়ে আসার পর টেকনাফের সাবরাং কাটাবনিয়া, খুরেরমূখ, মুন্ডার ডেইল ঘাট, টেকনাফ সদর মহেশখালীয়া পাড়া, লম্বরী মৎস্য ঘাট ও বাহারছড়া শামলাপুর মৎস্য ঘাট এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটায়। ট্রলারের মাঝি এবং দালালচক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা থেকে উর্ধে ২০ হাজার টাকা ট্রলার ভাড়া বাবৎ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গা নারীদের কাজ থেকে ও স্বর্ণ হাতিয়ে নিছে বলে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানায়। নির্যাতিত হোসেন আহমদ আরও জানান, শীলখালী, ধমকি পাড়া, বাহারছড়া, কোয়াইক্যংপাড়া, শীতপরিক্ষাপাড়া, খাইদরপাড়া, মাইজপাড়া, ধুমপাড়া, কুইজ্জাবিলপাড়া, হাচ্চুলতা, ময়দানের পাড়া, হাজী পাড়া, গঞ্জনদীয়াপাড়া, খুইন্যাপাড়া, ধংখালীপাড়া, সোজাপাড়া, দড়ীয়াপাড়া, বল্লাহপাড়া, শিকদারপাড়া, শইল্লাপাড়া ও বদুছড়াইপাড়ায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এসব পাড়া নারী পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের আরাকানের সর্বদক্ষিণে কুল্লোম, মেরুল্লাহ, আন্ডং ও উদং থেকে নাইক্ষ্যদ্বীয়া দিয়ে ট্রলার যোগে অনুপ্রবেশকারী হোসেন আহমদ, গুলবাহার, শাকের আহমদ ও রশিদা বেগম পৃথক ভাবে ৭৫ জন ৩টি ট্রলার যোগে তাদের পরিবার পরিজন ও অন্যান্য রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাগর পথে মুন্ডার ডেইল, লম্বরী ও শামলাপুর মৎস্য ঘাটে গত ৫ সেপ্টম্বর দিবাগত রাত্রে ঘাট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে। পরে তাদের কাছ ট্রলারের মাঝি ও দালালচক্র অতিরিক্ত টাকা ও স্বর্ণ জোরপূর্ব হাতিয়ে নেয় বলে ভূক্তভোগী রোহিঙ্গারা স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে তথ্য দিতে দিয়ে এসব অভিযোগ করেন। এর নিয়ন্ত্রন করছেন, টেকনাফের তালিকাভূক্ত মানবপাচারকারী চক্রের হোতারা। সেন্টমার্টিনদ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানায়, দ্বীপে প্রায় ২শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এসব রোহিঙ্গা যাতে লোকালয়ে আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য মাইকিং করা হয়েছে। জানা যায়, শাহপরীরদ্বীপে বদর মোকামে চোরাবালিতে রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি ট্রলার আটকে পড়েছে। হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। টেকনাফ কোষ্টগার্ড লেঃ কর্ণেল জানায় ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, এতে কেউ হতাহত হয়নি। অপর দিকে শাহপরীরদ্বীপ, হাবিরছড়া, হোয়াইক্যং এলাকায় ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে এবং ১৯ জন দালালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।