আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বব্যাপী চাপ বাড়ছে দেশটির ওপর। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারকে সমাধানের চাপ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগের পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে আজ মঙ্গলবার ঢাকা আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের আকাশ সীমায় মিয়ানমারের কয়েকটি হেলিকপটার ঢুকে যাওয়ায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতমো মারসুদি আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক ঝটিকা সফরে ঢাকা আসছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে এই সফর। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে অত্যাচার ও নির্যাতনের ফলে বাংলাদেশে বিপুল রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের প্রেক্ষাপটে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানায় সরকার। আজ দুপুরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলোচনা ও বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করবেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দিন ধরে মিয়ানমার সফর করেন। সেখানে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনীর প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেন।

রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে আকাশ সীমা লংঘন করে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে মিয়ানমারের হেলিকপটার ঢুকে পড়ে। গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর তিনবার আকাশ সীমা লংঘন করে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই লংঘনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং ১ সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাসে একটি কড়া কূটনৈতিক নোট পাঠায় মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয় এভাবে- আকাশ সীমা লংঘন সুপ্রতিবেশিসুলভ আচরণ নয়। এর ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি হবে। বাংলাদেশ যখন সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে মিয়ানমারকে সহয়তা করে আসছে, তখন এ ধরনের আচরণ নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতাকে ব্যাহত করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আকাশ সীমা লংঘনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের প্রতি দাবি জানানো হয় নোটে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেবা এরদোয়ান ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদসহ আটটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। এ সময়ে তুর্কী প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন ও মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও তুর্কী প্রেসিডেন্ট সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইরান, কাজাক, সেলেগাল, নাইজেরিয়া ও মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন।

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চলমান নিপীড়ন ও মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ যাবতকালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এবং চলমান সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি রাষ্ট্রপতিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুরস্ক কর্তৃক এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করেন। রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যাটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের আলোচনায় উপস্থাপনে তুরস্কের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন।

রাষ্ট্রপতি তুরস্কের রাষ্ট্রপতিকে এবং তুরস্কের জনগণকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন আলাপ ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি অত্যাচার ও দমন-পীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০ বত্সরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বলেন যে, সীমিত সম্পদ ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি অনুযায়ী মিয়ানমার হতে আগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থানের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদের প্রতি খাদ্য, বাসস্থান, ওষুধ, শিক্ষা ও অন্যান্য সকল সুবিধাদি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। তিনি অবিলম্বে সহিংসতা থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে তিনি ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুরস্কের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন এবং তুরস্কের ভবিষ্যত্ সহায়তার অভিপ্রায়কে স্বাগত জানান। আলোচনা শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে তিনি ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং রোহিঙ্গা সমস্যায় তুরস্কের সমর্থন ও তাঁর টেলিফোন কলের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।