কালের কন্ঠ :
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকারের দমন পীড়নে সৃষ্ট সংকট নিরসনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার ইউনূস সেন্টার থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

ড. ইউনূস তার চিঠিতে লিখেছেন, “মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবীয় ট্রাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ একটি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে, যে বিষয়ে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ” রোহিঙ্গাদের ওপর দশকের পর দশক ধরে চলা নির্যাতন ‘র‌্যাডিকালাইজেশনের’ জন্ম দিচ্ছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, “এই ভীতি থেকে র‌্যাডিকেলদের দ্বারা মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ একটি বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ”

গত বছরের শেষ দিকেও রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে একই ধরনের সংকট সৃষ্টি হলে অপর কয়েকজন নোবেল জয়ীর সঙ্গে তিনি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন ইউনূস। তিনি লিখেছেন, “আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এবার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির প্রেক্ষিতে নিরীহ নাগরিকদের উপর অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইন এলকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার জন্য আমি আপনাদের নিকট আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি। ”

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের উপায় খুঁজতে গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন’ নামে মিয়ানমার সরকার গঠিত ওই কমিশনের অধিকাংশ সদস্যই সে দেশের নাগরিক। তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, অবাধ চলাচলের সুযোগ, আইনের চোখে সমান অধিকার, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং নিজ ভূমিতে ফিরে আসা মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সহায়তা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছিল। ” এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্যে ইউনূস লিখেছেন, “মিয়ানমার সরকারকে জানিয়ে দেওয়া দরকার যে, সে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থায়ন রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। ”

ইউনূস আরও লিখেছেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবীয় সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা পালন করেছে- এটা দেখার জন্য বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে। ” রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটবে এবং তা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছেন এই বাংলাদেশি।