আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলছে বর্তমান বিশ্বের ভয়াবহতম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড। সেদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন। বসতি থেকে উচ্ছেদ হয়ে প্রাণভয়ে তারা ছুটছে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিহীন জাতি রোঙ্গিহাদের প্রতি এ নৃশংসতম হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনেও তেমন সরব হয়নি বিশ্বের পরাশক্তি ও প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলো। নিশ্চুপ রয়েছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি।

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের ক্ষেত্রে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। সে ঢেও লেগেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে সু চিকে দেওয়া শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ফিরেয়ে নেওয়ার। সু চির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়া হবে কিনা কিংবা তা সম্ভব কিনা এসব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা চলছেই। বিশ্বের বিবেকবান মানুষসহ শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইও সু চির কঠোর সমালোচনা করেছেন।

এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা সু চির পদক কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পুড়িয়েছেন সু চির ছবি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিশ্বব্যাপী চলছে সু চির মুণ্ডুপাত ও নোবেল কেড়ে নেওয়ার দাবি।

১৯৮৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন সু চি। কিন্তু জান্তা সরকার তাকে কারাবন্দি করে রাখে। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি কারাবন্দি থাকেন। তবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী সু চিকে ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বর্তমানে তার সেই নোবেলপ্রাপ্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

শুধু সু চিই নয়, এরআগে হেনরি কিসিঞ্জার ও বারাক ওবামার শান্তিতে প্রাপ্ত নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি ওঠে।

১৯৯১ সালে সু চিকে নোবেল দেওয়ার কমিটিতে ছিলেন রাজনীতিবিদ গানার স্টলসেট। তিনি বলেছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার কখনো ফেরত নেওয়া হয় না। এমনকি কমিটি নোবেলজয়ীদের প্রতি কোনো নিন্দাও জানায় না।

স্টলসেট আরও বলেন, এ পুরস্কার দেওয়া মানে কোনো সাধুর নাম ঘোষণা নয়। যখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন পদক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে তখনই কমিটির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে সেখানে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযান শুরু করে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে অন্তত চার শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিমের প্রাণহানি ঘটে। সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে রাখাইনে ত্রাণসহায়তা স্থগিত রেখেছে জাতিসংঘ।

এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে দ্বিতীয় বারের মতো দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করছে।

গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে একই ধরনের কঠোর অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের মুখে এরইমধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে অন্তত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।