মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও অভিযানের মুখে ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রবিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এতথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-র আঞ্চলিক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান।

কদিন আগে শনিবার ইউএনএইচসিআর জানিয়েছিল বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো। ফলে একদিনের ব্যবধানে আরও ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা রেডক্রসের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডের কয়েকটি স্থানে আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

.

 রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টদের পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, রবিবারও কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা ভিশন রবিবার দাবি করেছে, রাতেডাউং গ্রামের ঘরবাড়ি হারানো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকায় আটকা পড়েছে। তাদের মানবিক ও চিকিৎসা সহযোগিতা প্রয়োজন। রবিবার সকাল ১০টার দিকে মংগডুর নগা সা কুয়েই গ্রামে আগুন দিয়েছে সেনাবাহিনী।  পরে বিকাল ৫টার দিকে মংগডুর বালুহালি ও ফাউহালি গ্রামে আগুন দেয়। এতে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।  রোহিঙ্গা ভিশন নামের ফেসবুক পেজের এই দাবি অন্য কোনও সূত্র থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সর্বশেষ এই সহিংসতায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। শুক্রবার রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ জন নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাবাহিনী নিহত ৪শ জনের মধ্যে ৩৭০ জনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছে। তবে রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ব্যাংককভিত্তিক এক  মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটস দাবি করেছে, সিত্তি জেলার রাতারডাং-এর চাট পিং গ্রামে ১৪০০ মানুষের মধ্যে ২০০ জনকে এরইমধ্যে হত্যা করা হয়েছে বলে সেখানকার জীবিতরা জানিয়েছেন।

 যুক্তরাজ্যভিত্তিক রোহিঙ্গা ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এসময়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে অন্তত দেড় লাখ মানুষ। সহিংসতা কবলিত অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রোহিঙ্গা ব্লগারদের এই দাবির সত্যতা কোনও বার্তা সংস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি।

শনিবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে রাখাইনে ২৬০০ গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য দেশটি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করেছে।  তবে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইট ছবি ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে আগুন লাগিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

.

 এদিকে, কক্সবাজার জেলা টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ২ হাজার ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে কোস্টগার্ডের সদস্যরা।  রবিবার রাতে বেসরকারি মালিকানাধীন যমুনা টেলিভিশন এতথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ হাজার ২৬৬ জন শিশু ও ৪৮৭ জন নারী।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর অন্তত ২০টি ফাঁড়িতে একযোগে সমন্বিত হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রাথেংডাংয়ে অভিযানে একদিনেই শতাধিক বেসামরিক নাগরিক হত্যা করার অভিযোগ উঠে। এ সহিংসতা এখনও অব্যাহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। এসব রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে মিয়ানমার। দেশটি তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে।  সূত্র: রয়টার্স, গার্ডিয়ান।