সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া থেকে :

বিজিবির কঠোর অবস্থানের পরও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এক্ষেত্রে বিজিবি গুটিকয়েক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করলেও সিংহভাগ রোহিঙ্গা রাতের আধাঁরে অথবা ভোরের আলো ফুঁটার সাথে সাথে বিজিবির চোঁখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে । ইতিমধ্যে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করে আত্বীয় স্বজনদের বাড়ীসহ ঝুপড়ি নির্মন করে আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সুত্র জানায়,বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বজিবির কঠোর অবস্থানের পরও স্থল ও জলজ সীমান্তের অন্ততঃ ১৩টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের সহিংসতার কবলে পড়া অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে বিচ্ছন্ন ভাবে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে । যাদের মধ্যে অধিকাংশ উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী বস্তিতে ঢুকে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে সরজমিন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির সংলগ্ন বস্তি সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে,বিভিন্ন সীমান্ত পেরিয়ে আসা বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন রোড় ও বাজার রোড় দিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে। এটা সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিদিনকার চিত্র। বস্তির বাইরে কথা হয় মংডু জেলার খিয়ারি পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত সালামত উল্লাহ পুত্র মোঃ সালেক (৬০) এর সাথে। সে জানায়,তারা স্বপরিবারে ১৩জন বাংলাদেশ মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৩ দিন অবস্থান করার পর কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্র বধু মেয়ে ও নাতি সহ ১৩জন এক কাপড়ে বাপদাদার ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে সে জানান। মংডুর বলিবাজার গ্রামের ঝটিয়াখালী পাড়ার শামসুল আমিনের স্ত্রী তৈয়বা বেগম (২৫) জানান, ছোট ছোট তিন শিশু নিয়ে রবিবার দিবাগত রাতে সে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সে জানায়,গত তিনদিন ধরে শুধু পানি খেয়ে রয়েছে তারা।মংডুর আকবর পাড়ার নজু মিয়ার ছেলে জাবের হোছাইন (১৮) রেজু আমতলী সীমান্ত দিয়ে সোমবার রাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের সাথে ২৮জন অনুপ্রবেশ করে। মংডু খিয়ারি পাড়া এলাকার ছৈয়দুল আমিনের স্ত্রী মিরানা বেগম, ননদ হামিদা বেগম (১৭),দেবর জোবাইর হোছাইন (১৪) ও দুই শিশু সহ ৪দিন পূর্বে রেজু আমতলী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। মংডু জেলার বলি বাজার এলাকার শামসুল আলম (৫৮) তার স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৫০), পুত্র বধু ছেতেরা (২৬), ছেলে ইসমাইল (৩০), ইউনুছ (১৮), মোঃ রফিক (১২), জান্নাত আরা (১২) মোঃ রশিদ (৮) ইনতারা (৬), আনাস (৩), মোঃ তুফাইল (১) ও এক নাতি সহ ২৭ আগষ্ট তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে। এসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার পর বেশকিছু স্থানে লুটেরারা তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। শেষ সম্বল বলে তাদের আর অবশিষ্ট বলে কিছু নেই। উল্লেখিত অনুপ্রবেশকারীরা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে অবস্থানরত আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এদিকে সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের উপর সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পাচারকারী সিন্ডিকেট গুলো দরগাবিল,ডেইলপাড়া,হাতিমুরা,রেজু আমতলী,রহমতের বিল,ঘুমধুম তুমব্রু,ঝিমনখালী, কানজর পাড়া, হারাইঙ্গা ঘোনা, রহমতের বিল, ধামনখালী, জলপাইতলী, তমব্রু,ধুমধুম,বালুখালী,রহমতেরবিল,ওয়ালিদং সহ বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মন্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কাউকে জিরো পয়েন্ট অতিত্রুম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা।