এফ এম সুমন পেকুয়া :

দীর্ঘ এক যুগ ধরে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে উজানটিয়া-মাতারবাড়ী সেতুটি। পাইলিং আর পিলারের সব কাজ শেষ। কিন্তু থেমে আছে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। স্থানীয়রা জানান, ২০০৫ সালে ব্রীজটির কাজ শুরু হলেও সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই রহস্যজনক কারণেই সেতুটির নির্মাণকাজ থেমে যায়। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থেকে চলে যাওয়ার পর দেশে ওয়ান ইলেভেন এলে ঠিকাদার ব্রীজটির কাজ ফেলে পালিয়ে যান। এসময় ব্রীজের অধিকাংশ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এদিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকতে থাকতে নদীতে চলচলকারী ফিশিং বোটের ধাক্কায় বেশ কয়েকটি পিলার ইতিমধ্যে হেলে গেছে। মাতামুহুরীর প্রবল ¯্রােতে নড়েবড়ে হয়ে গেছে বাকী পিলার গুলোও। অপরদিকে দুইপাড়ের পিলারগুলোর মূল্যবান লোহাগুলোর অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এভাবে সরকারের কোটি টাকা এখন পানিতেই পড়ে আছে।
পেকুয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী হারু বাবু জানান, ২৪০ মিটার দীর্ঘ উজানটিয়া-মাতারবাড়ী সেতুটির জন্য ২০০৫ সালে তখনকার সরকার ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেতুটির প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষে ওয়ান ইলেভেনের সময় সেতুটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ধরে আর বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার ফলে মাতামুহুরী নদীর ¯্রােত, বোট চলাচলে অসাবধানতা, মালামাল চুরি হয়ে যাওয়া সহ নানা কারণে ওই ৫০ ভাগ কাজের এখন আর কোন টেম্পার নেই। পিলারগুলো এখন আর সেতু করার উপযোগী নেই বলে মনে করেন তিনি।
নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তম মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের সাথে পেকুয়ার সড়ক সংযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটির গুরুত্ব অপরিসিম। তাছাড়া মাতারবাড়ীতে উৎপাদিত লবণ চিংড়ী সড়কপথে কম সময়ে, স্বল্প খরচে চট্টগ্রাম সহ দেশের পরিবহনের জন্য এ সেতুটির বিকল্প নেই। স্থানীয়রা মনে করেন, উজানটিয়া-মাতারবাড়ী সেতুটি নির্মিত হলে মাতারবাড়ীর সাথে পেকুয়া সহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগের দুরত্ব কমপক্ষে ৫০ কিমি কমে আসবে। এতে করে যোগাযোগে যেমন সহজ হবে তেমনি পরিবহন খাতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে দ্বিগুন। স্থানীয় লবণ ও চিংড়ী ঘের মালিক রেজাউল করিম চৌধুরী মিন্টু জানান, উজানটিয়া-মাতারবাড়ী সেতুটি মহেশখালী সহ মাতারবাড়ীর মানুষের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পেকুয়ার মানুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। ২০০৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া এ সেতুটির নির্মাণকাজ দেশে ওয়ান ইলেভেন আসার সাথে সাথে রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী আজম উদ্দিন জানান, এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে সেতুটির গুরুত্ব যাঁচাই বাচাই করে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ সেতুটি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর থেকে সেতুটির নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তিনি। পূর্ব উজানটিয়ার বাসিন্দা আইনজীবি মীর মোশারফ হোসেন টিটু জানান, মাতামুহুরী নদীর উপর দিয়ে উজানটিয়ার সাথে মাতারবাড়ীর সংযোগ স্থাপনকারী এ সেতুটি এতদঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল কিন্তু মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা চরম হাতাশায় ভোগছি। আমরা নতুন করে ব্রীজটির কাজ শুরু করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু জানান, মাতারবাড়ী উজানটিয়া সেতুটি দুই উপকূলের জনপদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির ব্যাপারে বহুবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কেন কাজ হচ্ছেনা কেন তা তার বোধগম্য নয় বলে জানান তিনি। স্থানীয় লোকজন জানান, পিলারগুলো নদীর মাঝখানে লোহা বের করা অবস্থায় থেকে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে নদীতে বোট চলাচল করছে। ইতিমধ্যে পানির ভিতর থেকে উঁকি মেরে থাকা পিলার গুলোতে জোয়ারের সময় চলাচলকারী বহু বোট আটকে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে গত বার বছরে। সরকারের কাছে তাদের দাবি হচ্ছে হয় নতুন করে সেতু নির্মাণ করুন নয়তো অর্ধনির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ পিলারগুলো সরিয়ে ফেলে বোট চলাচল বিপদমুক্ত করুন।
পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সেতুটি করতে হলে এখন আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। কেননা দীর্ঘ বিরতির কারণে নির্মাণ করা পিলার সহ অন্যান্য স্থাপনাগুলো পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে পিলারগুলোর উপর আর সেতু করা সম্ভব হবেনা। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে এলজিইডির কক্সবাজার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিদুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী টিম এনে পরীক্ষ করে দেখেছি। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে যা স্থাপনা আছে তাতে বাকী কাজ করলে ওই সেতুটি দীর্ঘস্থায়ী হবেনা। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় নির্মিতব্য পিলারগুলোর অধিকাংশই হেলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, লবন ও চিংড়ী ব্যবসার প্রসারের কথা চিন্তা করে সরকার সেতুটি পুন:নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতেও পারে।