ইমাম খাইর, সীমান্ত থেকে :

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারজুড়ে আগুন জ্বলছে। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তে আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছে। এরমধ্যেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে।

তবে কক্সবাজার বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অনেকেই সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। পরিবেশ শান্ত হলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত নতুন কোন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হয়নি।

এদিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যূষিত গ্রামগুলোতে সে দেশের সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন তা-ব চলছেই। প্রতিদিন একের পর এক গ্রাম জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। যাকে যেভাবে পাচ্ছে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে।

বুধবার সকালে থেকে মিয়ানমারের বালুখালী, দারোগাপাড়া, জাম্যান্না, ফুটখালীর আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। ওইসব এলাকায় সাধারণ লোকজনকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে বলে জানান অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারের রাসিদং এর শোয়েবপাড়া থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের এলাকায় ১৪০০শ মানুষের মধ্য থেকে এক হাজার মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেশটির সেনারা জালিয়ে দিয়েছে তাদের বসতভিটা। চোখের সামনে স্বজনদের হত্যা করেছে। জীবন বাজি রেখে তারা এপারে পালিয়ে এসেছে।

তারা জানায়, মংডু, বুদিদং, রাসিদং, শোয়েবপাড়ার অবস্থা নাজুক। বুধবার ভোররাত থেকে সেখানে নতুন করে বসতবাড়ীতে আগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। মেয়েদের উপর নির্যাতন চলছে।

এদিকে টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীরদ্বীপ উপকূলে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো অন্তত ১০ জন। খবর নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ অনেক রোহিঙ্গা হতাহত হন। এঘটনার পর প্রতিদিনই বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। নাফ নদীর জলসীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। তখন প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর। কিন্তু এর কোনও তোয়াক্কা না করে রাখাইনে ফের সেনা মোতায়েন করলে বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে দেশের সেনা বাহিনী ও পুলিশ।