ডেস্ক নিউজ:
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ ও তাদের ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ‍কূটনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ কূটনৈতিক অস্ত্র ব্যবহারের মাত্রা ও চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসাবাদ’ ইস্যু যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে নেপিদোকে দুই দেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, নেপিদোকে আস্থায় নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো।

১৯৭৭ বা ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য যে প্রচলিত কূটনৈতিক অস্ত্র সরকার ব্যবহার করেছিল, ২০১২ সালে রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে ‘সন্ত্রাসবাদ ইস্যু’ যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ তার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা চালানো শুরু করে। একইসঙ্গে, বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় সীমান্তে রোহিঙ্গারা১৯৭৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রথম বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। ওই সময় মধ্যস্থতার মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ১৯৯২ সালেও অনুপ্রবেশের পর জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। এই দু’বারই বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল মূলত দ্বিপাক্ষিক।

কিন্তু ২০১২ সালে নতুন করে যোগ হয় সন্ত্রাসবাদ ইস্যু। এ সময় প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের সঙ্গে উগ্র বৌদ্ধদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন সন্ত্রাসবাদের অজুহাত দেখিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু করে। ওই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০১২ সালে শতাধিক নিহত হয়, যার অধিকাংশই ছিল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ওই সময় রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে তিনটি পুলিশ চৌকিতে হামলা চালিয়ে ৯ পুলিশকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে।

এর পর গত বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী ও পুলিশের ৩০টি চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সরকারি হিসেবে, এতে ১১ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং প্রায় ৮০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিহত হয়। এরপর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোয় কঠোর অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। তাদের দমন-পীড়নে প্রতিদিনই বাংলাদেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

সীমান্ত পরিস্থিতি উন্নতির জন্য ২০১২ সালের পর বাংলাদেশ দু’টি প্রস্তাব করে। এর একটি ছিল নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি এবং অন্যটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস প্রতিষ্ঠা। দুটির একটিও স্বাক্ষর করবে– এমন মতামত মিয়ানমার এখন পর্যন্ত দেয়নি।

সর্বশেষ সোমবার (২৮ আগস্ট) শুধু সীমান্ত নয়, এর আশেপাশের অঞ্চলেও যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি নতুন নয়। চল্লিশ বছর আগে প্রথম রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে এবং এরপর ১৯৯২ সালে আমরা প্রচলিত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং রোহিঙ্গা সমস্যাটি দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে। আমরা জানি, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত কোনও সমাধান নেই এবং এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার তার সাম্প্রতিক সরকারি বিবৃতিতে টেরোরিস্ট (সন্ত্রাসী) শব্দটি ব্যবহার করেছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা তাদের এই মিলিট্যান্টদের ধরার জন্য যৌথ অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিয়ে আমাদের সদিচ্ছার কথা জানিয়েছি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে এবং এর ফলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমরা আমাদের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছি।’