বাংলাদেশ প্রতিদিন:

রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্বিমুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। প্রথমত, ৫৮ দল নিয়ে গড়া সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) ব্যানারে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।

দ্বিতীয়ত, ইউএনএ জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে জোট করে আবারও মহাজোট গঠন করা। লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে যে কোনোভাবে জাতীয় পার্টির ১০০ আসনে বিজয়ী হওয়া। পার্টি মনে করে ১০০ আসন ঘরে তুলতে পারলে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠনে যে কোনো দলই বাধ্য হবে। আর এ ইস্যুতে বেশ আটঘাট বেঁধেই রাজনীতির মাঠে নেমেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের টার্গেট ইউএনএর ব্যানারে ১৫১ আসনে জিতে সরকার গঠন করা। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১৫১ আসনে বিজয় সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফরের পর থেকে পার্টির নেতা-কর্মীরা কতটা চাঙ্গা তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জোটের ব্যানারে সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও জোট হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেশবাসী যা চাইবে, দলের নেতা-কর্মীরা যা চাইবে তা উপলব্ধি করে পার্টির চেয়ারম্যান সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবেন। জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় এরশাদ নিজেই তত্ত্বাবধান করছেন। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করছেন পার্টির মহাসচিব। ইতিমধ্যে দলের সংসদ সদস্যদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি সময় দেওয়ার জন্য বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সংসদ সদস্যদের বাইরে দলের শীর্ষ নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও এলাকায় যাতায়াত বাড়াতে বলেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে দল মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন এরশাদ। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা যদি ১০০ আসনে বিজয়ী হতে পারে, তা হলে অন্য কোনো বড় দলের সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টি আগামীতে সরকার গঠন করতে পারবে। দলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থায় কোনোভাবেই ১৫১ আসনে বিজয়ী হয়ে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। তারা বলছেন, কোনো কারণে যদি শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়, তাহলে ওই দলের কাছেও কমপক্ষে ১০০ আসন চাইবে জাপা। এ ব্যাপারে ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনাও চলছে। পার্টির অধিকাংশ সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান। যদি শেষ মুহূর্তে এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, জাতীয় পার্টি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটকে কমপক্ষে ৭০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে বৃহত্তর রংপুরে কমপক্ষে ১৫টি আসনে জাপাকে ছাড় দিতে হবে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ রংপুর-১ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ ও লালমনিরহাটের আসনও জাপার পক্ষে ছাড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। এ ছাড়া বিএনপির একটি অংশও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আগামী নির্বাচনে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চান দলের চেয়ারম্যান। এটিকে বিবেচনায় নিয়েই সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে সাধারণ মানুষের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সাহায্য করছেন। এ ছাড়া এলাকায় গণসংযোগ করে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন। ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সমস্যা সমাধানও করছেন জাপার সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা।

জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি বলেন, বরাবরের মতো আগামীতেও কে বা কারা সরকার গঠন করবে তা নির্ভর করবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি বলেন, আমরা যত আসনই পাই না কেন, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে এমন প্রস্তাব যারা মানবে তাদের সঙ্গেই আমাদের নির্বাচন পরবর্তী জোট হবে।