মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ করায় দেশটির দূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে তা মিয়ানমারকেই নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। শনিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স আং মিন্টকে ডেকে এ কথা বলা হয়।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মিয়ানমারের দূতকে ডেকে পাঠিয়ে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছি। পাশাপাশি এ সহিংস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে অাবারও রোহিঙ্গা প্রবেশ করার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যাতে এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে না আসতে পারে বিষয়টি মিয়ানমারকেই নিশ্চিত করে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এছাড়া মিয়ানমারের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে বাঙালি অখ্যায়িত দিয়ে দেশটি যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে অামাদের আপত্তির বিষয়টি মিয়ানমারের দূতকে অবগত করে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছি।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের উপর হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইন রাজ্যে সহিংস পরিস্থিতি বাংলাদেশের নজরে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে এ সহিংসতায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায়ও বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে।

বিকেলে মিয়ানমারের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (এশিয়া ও প্যাসিফিক) মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে এর আগে গত বছর ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একই ধরনের অভিযানের বিষয়টি সামনে তুলে আনা হয়। যার ফলে সে সময়ে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক অনুপ্রবেশ করে।

এ সময়ের কথা মনে করিয়ে মাহবুব উজ জামান দূতকে জানান যে, রাখাইন রাজ্যের হাজারও নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মিয়ানমারের নাগরিক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছেন। এরা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। এ সময়ে তাদের ফিরে যাওয়া নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন সচিব। সেই সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন যে বাংলাদেশ চার লাখের মতো মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে।

তিনি দূতকে বলেন, নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ নিরাপত্তা মিয়ানমারের দেয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে খালি হাতে আসা এসব নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে মিয়ানমারের সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি উল্লেখ করে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে নিশ্চিত করেছে যে এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

বৈঠকে সচিব আনান কমিশনের প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঠিক যে সময়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিয়ে কফি আনান কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেন, ঠিক তখনই এ ধরনের সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনার পর উত্তেজনা আর শঙ্কার মধ্যে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী স্থল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের আশায় শুক্রবার থেকে নাফ নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে অসহায় কয়েক হাজার নারী-শিশু-বৃদ্ধ।

এদিকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। শুক্রবার ১৪৬ জন এবং শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭৩ জনকে আটকের পর মানবিক সহায়তা দিয়ে আবারও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।