শফিক আজাদ,উখিয়া:

উখিয়ার বালুখালী সংলগ্ন ঘুমধুম পয়েন্টের ওপারে ঢেকিবনিয়া এলাকায় শনিবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচন্ড গুলিবর্ষণে শব্দ শোনা গেছে। গুলিবর্ষনের ফলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলমানেরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে অন্যত্রে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সহিংতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার সন্নিকটে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যে করে বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে বিজিপি। এতে টেকিবনিয়া এলাকার মসজিদের খতিব মাওলানা এরশাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এছাড়াও মিয়ানমারের ফকিরাবাজার এলাকায় বিজিপি’র গুলিতে গুরুতর আহত আব্দুর রহিম(৭০)নামের এক বৃদ্ধ মারা যাওয়া দাবি করেছে রোহিঙ্গারা। তাছাড়া চমেকে মুছা নামের এক গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা মারা গেছে।

সরেজমিন ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলি, ঘুমধুম লাল ব্রিজ, তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা কাটা তারের ওপারে আত্মনাৎ করছে। তাঁরা চিৎকার দিয়ে বলতে শোনা গেছে কোন রকম জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে তাঁদেরকে আশ্রয় দেওয়া হউক। প্রয়োজনে না খেয়ে মরবে বাংলাদেশে তারপরও মিয়ানমারের সেনা ও রাখাইনের নির্যাতন থেকে বাচানোর আকুতি জানান এসব রোহিঙ্গারা। বিজিবি’র কড়া প্রতিরোধে মূখে জীবন বাঁচাতে ঝুকি নিয়ে কাটা তারের বেড়া পার হয়ে ঝাপ দিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশু,কিশোর ও বয়োবিদ্ধরা।

৩৪বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মনঞ্জুরুল হাসান খাঁন জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক গুলি শব্দ শোনা গেছে শনিবার দুপুরে। এতে সীমান্তে অবস্থানকারী স্থানীয়রাও অজানা ভয়ভীতির ফলে পালিয়ে যাচ্ছে অন্যত্রে। তারপরও বিজিবি’র রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে।

ঘুমধুম বিজিবি’র নায়েক সুবেদার জাকির বলেন, সীমান্তের জলপাইতলি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় প্রায় ৫শতাধিক রোহিঙ্গাদের আটক করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে সুযোগ বুঝে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।

উখিয়া থানার এসআই মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে প্রতিরোধে কাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৪জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশের সময় আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ঘুমধমু জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) ও তাঁর ভাই মোঃ নোমান (৪৫) বলেন, তারা স্ত্রী,পুত্র,জায়গা-জমি,গরু,ছাগল,হাঁস,মুরগী ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে বিজিবি’র হাতে আটক অবস্থায় রয়েছে এরা। তাঁরা জানান বিজিপির গুলিতে তাঁদের এলাকার হাবিবুল্লাহ ছেলে মাওলানা এরশাদ মারা গেছে। একই এলাকার জয়নাল আবেদীন(৩৩) বলেন, শনিবার দুপুরে অতর্কিত অবস্থায় প্রচন্ড গুলি শব্দ পেয়ে সে স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন (২৯) ছেলে হাসান (৭) মোঃ ইছা (৫) মেয়ে মাহিদা (২)কে নিয়ে কাটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছে। বয়োবিদ্ধ শামারুব (৯০) অস্পষ্ট কন্ঠে বলেন, দুপুরে হাত খেতে বসলে শোনা যায় গুলি শব্দ তখন তার ছেলে জামাল আহমদ তাঁকে কাদে করে নিয়ে এসে সীমান্ত পার করিয়েছে। সে হাটতেও পারে না।

রেজু আমতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মোঃ আলম জানান, তাঁদের গ্রামের আব্দুর রহিম নামের এক যুবক বিজিপি’র গুলিতে গুরুতর আহত হলে তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা বাংলাদেশে নিয়ে আসার সময় ওয়ালিদং পাহাড়ের চিককুম এলাকায় পৌছলে সে মারা যায়। বর্তমানে তাঁর মৃত দেহ বাংলাদেশের অভ্যান্তরে চিককুম এলাকায় রয়েছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। অপরদিকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত মুছা ও মোক্তার ২জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হেেল সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুছা নামের এক রোহিঙ্গা মারা গেছে।