আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ (কক্সবাজার) :

মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে সহিংসতার ফলে আতংকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যন্তরে শতশত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হয়ে রয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানাযায়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ৭৩ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আটক পূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ড টহল জোরদার সহ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শূক্রবারে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হলে শুক্রবার ভোররাতে কয়েকশত রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বিজিবি তাদের প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে মুসলমানদের উপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে সুত্রে জানা গেছে।

এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুর ১ টায় টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের আইনশৃংখলা বিষয়ক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এরা কোন ভাবেই যেন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে সতর্ক এবং নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। যারা রোহিঙ্গা পারাপার, অনুপ্রবেশে সহযোগীতা, আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের বহনকারী সিএনজি, টমটম গাড়ীসহ যে কোন ধরনের যান বাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই রোঙ্গিাদের কারণে আমাদের দেশের আইনশৃংখলা ও সামাজিক ভাবমুর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। তাই বার বার তাদের সেই সুযোগ দেওয়া যায়না। এজন্য সীমান্তে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করতে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃংখলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিদেরও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভুমিকা অতি প্রয়োজন। ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুর ১ টায় টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ উদ্দীন ছিদ্দীকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, কক্সবাজারের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) আনোয়ারুল নাসের, সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) চাইলাউ চাকমা, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাঈন উদ্দিন খাঁন, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এসকে আনোয়ার, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, টেকনাফ পৌর প্যানেল মেয়র কুহিনুর আক্তার, ইউপি মেম্বার জালাল উদ্দিন প্রমূখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, টেকনাফ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি, পৌর প্যানেল মেয়র মাওঃ মুজিবুর রহমান, টেকনাফ সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল্লাহ, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা, বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকবৃন্দ। বিশেষ অতিথির ব্যক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে অবস্থানরত আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ করে অনুপ্রবেশ করাতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের লক্ষ্য রাখা জরুরী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যেন সীমান্তের কাছাকাছি যেতে না পারে সে জন্য ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের গতিবিধির প্রতি নজরদারী রাখতে হবে।

জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গাদের শিগগিরই দেশের অন্য যে কোন স্থানে স্থান্তরিত করে টেকনাফকে রোহিঙ্গা মুক্ত করতে দাবী জানান।

এদিকে শুক্রবার রাত ৯ টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক পুর্বক স্বদেশ ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার জাফর ইমাম সজিব জানান, নাফ নদী জুড়ে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে ৫৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বহনকারী একটি নৌকা অনুপ্রবেশকালে আটক পূর্বক একই সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।

অপরদিকে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, নাফ নদী পেরিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক পূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এতে চার শিশু, ৮ নারী ও পাঁচ জন পুরুষ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে বিজিবি জওয়ানরা কড়া পাহারায় রয়েছে। কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় সেদেশের কয়েকজন পুলিশ নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। এর জেরধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। আল ইয়াকিন নামক একটি উগ্রপন্থী সংগঠন এ হামলার দাবী করছিল।