আব্দুল আলীম নোবেল:
কক্সবাজারের টেকনাফের মৌচনি,লেদা, উখিয়া, উপজেলার কুতুপালং সহ জেলার জুড়ে বন বিভাগের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে রোহিঙ্গরা। যে খানে রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গাদের শিবির। প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গরাও পাহাড়ি জমি দখল করে কোন না কোন জায়গায় বসতি গড়ে তুলছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এই রোহিঙ্গা শিবিরের আশে পাশে আরও কয়েক হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি করছে কয়েক লাখ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। এখন তাদের লাগাম টেনে না ধরলে এই জেলায় তাদের কারণে স্থানীয়রা বসবাস করাও অনেকটা দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে। সম্প্রতি উখিয়ার ঘাট বন বিটের আওতাধিন সৃজিত ৩০ হেক্টর জমির উপর রোহিঙ্গারা দখল করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ ৭৫ জন সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে স্বারক লিপি দিয়েছে বলে জানাগেছে। তাদের দাবী রোহিঙ্গরা বন বিভাগের জমি প্রতিদিন শত শত একর গিলে খাচ্ছে। নির্মাণ করছে বসত ঘর,মসজিদ,দোকান ঘর সহ নানা স্থাপনা। বিশেষ করে সামাজিক বনায়নের জমি দখল করায় ক্ষতির শিকার হয় এইসব সামাজিক বনায়নের উপকারভোগিরা।

সূত্র জানায়, টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের পাশে রয়েছে আরও ৩০ হাজার রোহিঙ্গার বিশাল বসতি। এ ছাড়া জেলার সমুদ্র উপকূলের হিমছড়ি, বড়ছড়া, বাহারছড়া, মনখালী, ঝাউবাগান ও কক্সবাজার পৌরসভার ভেতর কয়েকটি পাহাড় এবং উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া উপজেলায় বসবাস করছে আরও অন্তত আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা সরকারি বন-জঙ্গল উজাড়ের পাশাপাশি আয়-রোজগারের জন্য হামলে পড়ছে শহরের এদিক-সেদিক। অনেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার ২৪ লাখ মানুষ।

কক্সবাজারের দক্ষিল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা করা যাচ্ছে না। তারা যেন নতুন করে বনভূমি দখল করে বসতি স্থাপন করতে না পারে, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার চিটি লেখা হয়েছে। এর পরেও বন বিভাগের লোকজন কোনভাবে কাউকে ছাড় দেয়নি। তবে স্বল্পসংখ্যক বনকর্মী দিয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে সামাল দেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ সরকারী কলেজের প্রভাষক আবু তাহের বলেন, বর্তমানে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করছে। তারা দেশের শ্রমবাজার দখলের পাশাপাশি ইয়াবাসহ মাদক পাচার, চুরি, জমি দখল, ডাকাতি, ছিনতাই, অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত। এ কারণে দেশের জননিরাপত্তা ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এখন নতুন করে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে নিয়ে আসার চক্রান্ত করছে দেশি-বিদেশি একটি চক্র। দিন দিন রোহিঙ্গা ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে কক্সবাজারের বনভূমি। বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি। আর এ সব রোহিঙ্গারা গাছ উজাড় করে ধ্বংস করছে বনসম্পদ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৭৮ সালের পর থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে এবং বর্তমানে এটি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ভূমিদস্যুদের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়তই। যা প্রশাসন দেখেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দিপু বলেন, ‘বন বিভাগের ভূমিকা রহস্যজনক। তারা ভূমি দুস্যদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উচ্ছেদের জন্য বারবার বলা হলেও বনবিভাগ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের এ নেতার।