হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সুনাম এবং মেধার দিক থেকে এগিয়ে থাকা গর্জনিয়ার মাঝিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়কে ঘিরে অভিযোগ অনুযোগের যেন অন্ত নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোহাম্মদ ইউনুছ একযুগেরও বেশি সময় শ্রম দিয়ে বিদ্যালয়কে সাফল্য এনে দিয়েছেন। অথচ তিনি গত মার্চ মাসে হঠাৎ মনে কষ্ট নিয়ে-নিজ ইচ্ছায় জাউচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তাঁর বদলির পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন একই বিদ্যালয়ে ১৯ বছর ধরে কর্মরত থাকা মনির উদ্দিন আহমদ। মনিরের স্ত্রী সাহিদা আক্তারও অত্র বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এসএম হুমায়ুন কবির। তিনি রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। হুমায়ুন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকেই মনিরের দাপট বেড়ে গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপিও দেওয়া হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদ ও গর্জনিয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনিরুল আলম বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিদ্বেষীভাব ও একগোয়ামির কারণে বিদ্যালয়টি সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখার মানও আগের মত নেই। সময় অসময়ে দ্বন্দ্ব তৈরী হচ্ছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিনের মতামতও অনেকটা এক। তিনি বলেন, মনির উদ্দিনের দাপুটেভাব কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যতকে নষ্ট করছে।

অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনির সরকার বিরোধী গোপন বৈঠকও করেন। কথিত আছে তিনি এক সময় শিবিরের রাজনীতিতে সক্রীয় ছিলেন। এখনো বাইতুল মাল (জামায়াত-শিবিরের সংগঠন পরিচালনার জন্য জন্য স্বেচ্ছায় টাকা) দেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। তবে বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কমিটির বার বার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। তবে তিনি শিক্ষক হিসাবে ভাল। মানুষ হিসাবে একরোখা হলেও টাকা মেরে খাওয়ার পক্ষে নয়। বিশেষ করে তাঁর আপন খালাত ভাই জসিম উদ্দিন দাতা সদস্য হওয়ার পর থেকে তা আরও বেড়েছে। সে কমিটিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করতে তৎপর।

অপর একটি সূত্র জানায়, দাতা সদস্য জসিম উদ্দিন শিক্ষাশূণ্য। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। মূলত জসিমের অত্যাচারে অত্যন্ত দক্ষ ও সুনাম অর্জনকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুছ স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলি হয়েছেন। বর্তমানেও জসিমের আচারণে সহকারি শিক্ষকরা অনেকটা ক্ষুব্ধ।

মাঝিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উচ্চবিদ্যালয় প্রতিনিধি সুকুমার বড়–য়া বলেন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য একজন ভাল প্রধান শিক্ষক অবশ্যই দরকার। এসএম হুমায়ুন কবির বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলসহ সরকারি কর্মকর্তা ও নানা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হয়েছিল। এই পরিবেশ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাজাহান আলি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওসমান গণি বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।