ডেস্ক নিউজ:

সম্প্রতি সময়ে বেড়েছে ধর্ষণ। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই প্রকাশ হচ্ছে নারীর প্রতি এ নৃশংসতার খবর। ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণই শেষ নয়, খুন করা হচ্ছে নৃশংসভাবে। সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে নারীরা রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ১০০ জন নারী।

ধর্ষণ নিয়ে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আইনবিদ, মানবাধিকার সংস্থা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারসহ বিশিষ্টজনরা ধর্ষণের ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

সম্প্রতি সময়ে ধর্ষণ বাড়ার পেছনে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পুরুষের বিকৃতির মানসিকতা, মাদক, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার, নৈতিকতাহীন জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার অভাব, নারীদের ভোগের পণ্য মনে করা এবং পুরুষের মানসিক অসুস্থতাতে দায়ী করা হয়েছে।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মুহিত কামাল বলেন, ধর্ষণ বেড়েছে। আগেই কোনো অংশে কম ছিল বলে আমার মনে হয় না। তবে এখন গণমাধ্যমের কারণে প্রকাশিত হচ্ছে বেশি। স্যোশাল মিডিয়ার কারণে সব ঘটনাই প্রকাশ হচ্ছে। তবে ধর্ষণ আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রায় ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন। এছাড়া ১০ থেকে ১২ বছরেরও অধিকাংশ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, হিংস্র বিবেক, ক্ষমতার অপব্যবহার, অংহকার, আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব, নারীর প্রতি অশ্রদ্ধা ইত্যাদি এসব বিষয় দায়ী। এছাড়া মাদক, পর্নোগ্রাফির সহজলভ্য ব্যবহার। তবে শিশুদের এসব বিষয় থেকে দূরে রাখতে পারলেই কেবল ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব।

এ বিষয়ে মনবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, সম্প্রতি সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ১০০ জন নারী।

সিগমা হুদা আরো বলেন, একজন পুরুষ তার মা ও মেয়েকে যেভাবে সম্মান করে, সে যদি নারীদের ওইভাবে সম্মান করত তাহলে হয়তো এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটত না। পুরুষদের বিকৃতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের পণ্য না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ডিসি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ধর্ষণের পেছনে সামাজিক সমস্যা যতটা দায়ী, তারচেয়ে ব্যক্তিত্বের চরম অবক্ষয় অনেক বেশি দায়ী। এরপর সামাজিক ও পারিবারিক কারণ তো রয়েছেই।

ফরিদা ইয়াসমিন আরো বলেন, যেসব পুরুষ ধর্ষণ করে তারা বিকৃত মানসিকতার। তারা নারীদের ভোগের পণ্য মনে করে। যারা ধর্ষণ করে সেই পুরুষই অসুস্থ। ধর্ষণ ও সাইবার ক্রাইম বেড়ে গেছে। এমন কোনো মাস নেই, যে মাসে সাইবার ক্রাইমের ভিকটিম নেই। এটি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে শুধু সামাজিক মূল্যবোধই নয়, ব্যক্তিমূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে।

গত বছর এক হাজারেরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের ১৪টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলছে, গত বছর এক হাজার ৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।