বিদেশ ডেস্ক:
নাইজেরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের হাতে শিশু-কিশোরদের অপহৃত হওয়ার পরিমাণ অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। অপহৃত শিশুদের প্ররোচিত করা হচ্ছে জঙ্গি হামলায়। দেখানো হচ্ছে পরকালে বেহেশত পাওয়ার লোভ। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য অনুযায়ী, এভাবে চলতি বছরে কম করে ৮৩ জন শিশু ও কিশোরকে ‘মানব বোমা’ হিসেবে ব্যবহার করেছে ওই জঙ্গি সংগঠনটি। ২০১৬ সালে অপহরণের শিকার হয়েছিল ১৯জন শিশুকিশোর।
নাইজেরিয়ায় বেড়েছে বোকো হারামের অপহরণের সংখ্যা

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মানব বোমা’ হিসেবে যে সকল শিশু ও কিশোর বা কিশোরীকে ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই মেয়ে। ৮৩ জনের দলে ৫৫ জন ও ১৩ জন ছেলে আছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করেছে জাতিসংঘ। যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। এর মধ্যে অনেকেই আছে যাদের বয়স ১০ বছরের কম।

অপহৃত শিশুকিশোরদের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জাতিসংঘের দেওয়া নতুন এই রিপোর্ট অনেকটাই চিন্তা বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। কারণ দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর ১৫ বছরের কম নিচে কোনো শিশু বা কিশোর-কিশোরীকে অপহরণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আফ্রিকা মহাদেশের নাইজেরিয়ায় প্রত্যেক বছরই বহু শিশু ও কিশোর বা কিশোরীকে অপহরণ করে বোকো হারাম জঙ্গি সংগঠন।

উত্তর নাইজেরিয়ার সেনাসূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর এক খবরে বলা হয়েছে, বাজারসহ বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করা হয় ওইসব শিশুদের। তারা হয়তো কখনও কখনও ভয় পেয়ে যথাযথ স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কাউকে হতাহত করতে ব্যর্থ হয়। ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকা বলছে, ত্রাণকর্মীরা ওই শিশুদের আত্মঘাতি হামলাকারী বলতে নারাজ। তাদের কাছে ওই শিশুরা মানব বোমায় রূপান্তরিত। ইউনিসেফ এর মতেও, ওই শিশুরা ঘটনার অসহায় শিকার। তারা কোনওভাবেই অপরাধী নয়।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে ২০১৭ সালে। শুধু তাই নয় ২০১৫ বা ২০১৬ সালের চেয়ে চারগুণ বেশি শিশু-কিশোরকে এই বছর ‘মানব বোমা’য় ব্যবহার করা হয়েছে।
চলতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তিন বছর আগে চিবক থেকে অপহৃত হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৮২ জন নারীকে মুক্তি দেয় বোকো হারাম। পরে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র গারবা শেহু জানান, এক নারী সেখান থেকে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। শেহু আরও জানান, বোকো হারামের এক সদস্যকে বিয়ে করায় ওই বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় আসতে রাজি হয়নি সে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ২৭৬ জন নারীকে অপহরণ করে বোকো হারাম। সেখান থেকে ৫৭ জন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। আর বাকি ২১৯ জনের মধ্যে ১০৬ জনকে পরে বিভিন্ন সময়ে মুক্তি দেওয়া হয় কিংবা উদ্ধার করা হয়। এখনও ১১৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।