ডেস্ক নিউজ:
বগুড়ায় ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় আলোচিত তুফান সরকার বিয়ে করেছে ছয়বার। তবে সেই বিয়ের কনে অন্য কেউ নয়, তার স্ত্রী আশা খাতুন। ৯ বছরের দাম্পত্যজীবনে তুফান সরকার স্ত্রী আশাকে পাঁচবার তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করেছে। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ লেগেই ছিল। কথায় কথায় নিজেরা মারামারি করত।

এসব কারণে তুফান ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিত। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে বিচার সালিশও হয়েছে। বারবার তালাক দিয়ে মৌলভী ডেকে আবারও তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুফান সরকার নিজেই পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছে।

এদিকে ভর্তির কথা বলে ওই স্কুলছাত্রীকে গাড়ি পাঠিয়ে নিজের বাড়িতে ডেকে আনে তুফান। পরে কাগজপত্র সই করার নাম করে বেডরুমে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তুফানের পাঁচ বন্ধু পাহারায় ছিল। ধর্ষণের পর তাকে জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়ানো হয়। পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে তুফান এসব কথা বলেছে। তুফানের ভাষ্য, সে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে মেয়েটিকে বিরক্ত করত।

তাকে খুশি করতে সে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার কথা বলে। সে ওই ফাঁদে পা দেয়। তুফান ওই ছাত্রীর কাছে কাগজপত্র চায়। বন্ধু দীপুর মাধ্যমে তাকে কাগজপত্র এবং ৪ হাজার টাকা দেয় মেয়েটি।

১৭ জুলাই তুফান ওই কিশোরীকে জানায়, সে ঢাকা যাবে। ভর্তির জন্য কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর লাগবে। সে আসতে অস্বীকৃতি জানালে দুই সহযোগী আতিক ও দীপু তাকে গাড়িতে করে নিয়ে আসে।

কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার নাম করে মেয়েটিকে বেডরুমে নিয়ে ধর্ষণ করে তুফান। এ সময় তার পাঁচ বন্ধু আতিক, দীপু, রুপম, শিমুল ও মুন্না বাইরে পাহারা দিয়েছে। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়ায় তুফান। এসব স্বীকার করে পুলিশের কাছে তুফান সরকারের ভাষ্য, ধর্ষণের পর ওই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এ সময় আতিকের সহায়তায় রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ আনিয়ে কিশোরীকে খাওয়ানো হয়। তারপর তুফান, আতিক ও জিতু প্রাইভেট কারে কিশোরীকে বাসায় পৌঁছে দেয়। তারপর তুফান ঢাকায় যায়।

তুফান পুলিশকে আরো বলেছে, বিষয়টি তার স্ত্রী আশা জেনে যায়। ২৮ জুলাই তার স্ত্রী আশা খাতুন, তার বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, তুফানের শাশুড়ি রুমি, তুফানের বন্ধু আতিক, দীপু, রুপম, শিমুল ও মুন্না কৌশলে ওই স্কুলছাত্রী ও তার মাকে ডেকে আনে। সেখানে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার পাশাপাশি রড দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় তুফান নিজের বাসায় ঘুমিয়ে ছিল বলে দাবি করে।

এ ঘটনার পর ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার কিশোরী বগুড়া সদর থানায় দুটি মামলা করে। বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণ এবং পরে তাকে ও তার মাকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত শেষ করে এ মামলায় দ্রুত অভিযোগপত্র দেয়া হবে।