জিকির উল্লাহ জিকু, মহেশখালী থেকে ফিরে :

“আমরা সকলে মিলিয়া এক সিদ্ধি, এক ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া বিকশিত হতে চাই” ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে নাট্যভবনে সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর উদ্যেগে মুসলিম বঙ্গীয় তরুণ সমাজের একটি সম্মেলনে সভাপতি হিসাবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওই বক্তব্যের লাইনের অনুরনণ হচ্ছে আজ ১৯ আগষ্টের মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিল ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রাণে আবেগপূর্ণ উদ্দীপনা হিসেবে। মায়াচ্ছন্ন উপজেলা যুবদলের নেতৃত্বে গতিময়তা ও অনুপ্রেরণা যোগাতে মধ্যম সারির নেতাকর্মী ও তৃণমূলে এখন সাজসাজ রব। দেখা যাচ্ছে প্রাণচাঞ্চল্য এবং সিনিয়রদের মাঝে তুুমুুুুল নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা।

 

তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সাথে আলাপে জানা যায়, তাদের আবেগ-আগ্রহ এবং চাওয়া একটাই নেতা নয় নেতৃত্ব যার মাঝে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা তারুণ্যে ভরপুর। আরো দেখা যায়, এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের কর্মী এবং যুবনেতারা একতাবদ্ধ এবং শপথবদ্ধ কণ্ঠের আওয়াজ-নেতৃত্ব সৃষ্টিতে আর পকেট কমিটি নয়।

এবিষয়ে কথা হলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আজিজুুুুল করিম জয়ের মতে, মহেশখালী উপজেলা যুবদলকে গোছাতে হলে শক্ত কমিটি দরকার। শক্ত কমিটির চিত্রায়ন করেন এভাবে-ছাত্রদল নেতা হওয়া, তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী, পুরাতন ও মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরবেনা,স্বকীয়তা সম্পন্ন, ব্যক্তিত্বপূর্ণ, সংগঠক, কর্মচেতনা, সৃষ্টিশীল মন মানসিকতা সম্পন্ন দলের প্রতি অবিচল এবং শ্রদ্ধাশীল।

সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন মকছুদ আলম নিরু ও মোস্তফা কামাল কমিটি। তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ-অনুুুযোগ থাকলেও সদ্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির মতে, গত যুবদলের মরা গাঙে প্রাণের সঞ্চার করেছেন মকছুদ ও মোস্তফা কমিটি সে অর্থে সফল আবার সভাপতি প্রার্থী আনোয়ার পাশার মতে, মাত্র ৩টি ইউনিয়নে কমিটি করতে পারা সফলতা নহে। জেলা সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বলের ভাষ্য কারো অভিযোগে নয় সাংগঠনিক ধারাবাহিকতায় নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিল আর যথা নিয়মেই নেতৃত্ব বাছাই হবে।

জানা যায়, ৩টি ইউনিয়নে কমিটি হওয়ায় জেলার সিদ্ধান্ত মতে, উপজেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১০১ জনই কাউন্সিল হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। ইতিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫-২০ হবে বলে ধারণা দেন এক বিএনপি নেতা। অ

নেক প্রার্থীর সাথে কথা হলে বেশীর ভাগ প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশংকা করে জানান, মহেশখালীতে অতীতের দিকে থাকালে দেখা যায়,কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচিত হয়নি, সিলেকশন পদ্ধতি মানে ভাগাভাগির কমিটি হয়েছে, যেটাকে পকেট কমিটি বলা হয়।

 

এবিষয়ে কথা হয় সভাপতি প্রার্থী মো: আনোয়ার পাশার সাথে তিনি বলেন, যেকোন পদ্ধতিতে তিনি রাজী। তবে উত্তম পন্থা ভোটের মাধ্যমে।

সভাপতি প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল সভাপতি তরুণ আইনজীবি এড. নছর উল্লাহর মতে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দরা যেটা ভাল মনে করেন ভাল।ভাল হয় কাউন্সিলের ভোটে নেতৃত্ব বাছাই এতে তৃণমূলের মূল্যায়ন হয় বলে জানান।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুল করিম জয়ের মতামত জানতে চাইলে বলেন- রাজনীতিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে সেবার মানসিকতা আছে এমন নেতৃত্ব জরুরী তার মতেও এমন নেতৃত্ব বাছাই করতে হলে কাউন্সিলের প্রত্যক্ষ ভোট।

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আনছারুল করিম টিটু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন-যুবদল হচ্ছে বিএনপি’র প্রধান অঙ্গসংগঠন, তাই এর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশী নেতা বাছাইয়ে তৃণমূল কর্মীর ভোটে হলে ভাল হয়। বর্তমান সভাপতি এবং সম্পাদক মকছুদ আলম নিরু ও সম্পাদক মোস্তফা কামাল নিজেদের সফল মনে করে তৃণমূল কর্মীরা যদি চাই তাহলে আবারো দায়িত্ব নিতে রাজী বলে জানান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই অঞ্চলের জনপ্রিয় দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেহাল দশা। প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠন কম-বেশী সক্রিয় থাকলেও প্রতিটি সংগঠনের সিনিয়র নেতারা দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি মুখি।

এনিয়ে কথা হলে বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন-যদি সত্যটা বলি তাহলে মহেশখালীতে অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নেতারা ব্যক্তিমুখি করে পকেট কমিটিতে রূপান্তরিত করেছে।

তিনি আরো বলেন-বর্তমান যুবদল উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এড.নুরুল আলমের অনুসারী, বর্তমান ছাত্রদল উপজেলা সম্পাদক আবু বক্করের চেয়ারম্যানের অনুযায়ী, আলোচিত সংগঠন স্বেচ্ছাসেবকদল ফরিদ মিয়া আরমানের অনুগামী। এটা কারো জন্য এবং দলের জন্য শুভ নয়। তাই এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জেলা নেতাদের কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া চাই। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আলোচনায় এবং সংগঠনের কর্মসূচীর সময়ে আচরণে এসত্যতার বাস্তব চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

একটি গ্রহণযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান যুবদলের কমিটিকে নিজের মত ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যর্থতায় বিএনপি’র পদ থেকে পদ ত্যাগের হুমকিও দেয় এবং নির্দ্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রার্থী না হতে নিষেধাজ্ঞা চাপ দিচ্ছে। মহেশখালীতে যুবদল মোটামুটি নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও চাঙ্গা রাখছিল দুর্দিনে। যুবদল বিএনপি অফিস এবং সভাপতি এড.নুরুল আলমকে অনুসরণ করে থাকে। আর ছাত্রদল নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক। সবচেয়ে বেশী সমালোচিত হচ্ছে সভাপতির এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন নিয়ে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আছে সেখানে এমন নেতৃত্ব প্রশ্নবোধক তো বটেই অনেকের মতে মহেশখালী বিএনপি’র ছাত্র রাজনীতির দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।ওই ছাত্রদলও একটি পক্ষ না নিয়ে পারেনি তার কারণ যার সহযোগিতায় লবিং এ কমিটির পদাধিকারী তার কৃতজ্ঞতায়। সারা দেশের ন্যায় মহেশখালীতেও আলোচিত ছিল স্বেচ্ছাসেবকদল। একতা, শৃঙখলা মিছিল করার সামর্থ থাকলেও এখনো পর্যন্ত পূণার্ঙ্গ নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি। এই স্বেচ্ছাসেবকদলও সালাহ উদ্দিন আহমদ আর আরমান ফরিদ বাদে আর কিছু বুঝে না। তাই সংগঠনের নেতাদের ব্যক্তি মুখি থেকে উত্তরণের পথ একটাই কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা। কর্মীদের ভোটে নির্বাচিত হলে একদিকে কর্মীরা যেমন সম্মানিত হবে যার পরশে তৃণমূলে চাঙ্গা হবে। কারো প্রতি কৃতজ্ঞাবোধ থেকে পকেটে ঢুকে যাবে না। যুবদলের কাউন্সিলকে ঘিরে যে ব্যানার পেস্টুনে উৎসাহের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এটাই সুযোগ দায়িত্বশীল নেতাদের। পদ্ম যেমন শত পাঁপড়িসহ মৃণাল অবলম্বনে ফুটে উঠে তেমনি মহেশখালীর তৃণমূলের যুুবপ্রাণরা বিকশিত হতে চান তেমন একজন নেতাকে নিয়ে যার ধ্যান হবে দলপতি নয় দলের ধ্যান।

জেলা বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা সহমত পোষণ করে বলেন- যোগ্য, দক্ষ ও সুসংগঠকের অভাবে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন বিএনপি’র হাতছাড়া হয় তাই আর নয়। সম্মেলন অংশ গ্রহণ করছেন জানিয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল এবং সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসান উভয়ে বলেন-গঠনতান্ত্রিকভাবেই সম্মেলন ও কাউন্সিল হবে আস্থা রাখতে পারেন।