সিবিএন:
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিলিং লাইসেন্স খোঁজ নিতে হার্ডলাইনে জেলা প্রশাসন। এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তিনি জানান, ডিলিং লাইসেন্সের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে মাঠে নামবে মনিটরিং টিম।

প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবসায়ীদের সর্তক করা হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা ডিলিং লাইসেন্স না নিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সুত্র মতে, পর্যটন শহর কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলে ৫ হাজারেরও অধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পৌর এলাকার বাইরে উপজেলাগুলোতেও রয়েছে হাজার দশেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ডিলিং লাইসেন্স নাই। এতে প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর এই রাজস্ব আদায়ে কঠোর হচ্ছে জেলা প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে শুরু হবে রাজস্ব আদায়ের অভিযান। তবে ডিলিং লাইসেন্স কিংবা ব্যবসায়ীক লাইসেন্স সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনেই ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সটি নিচ্ছে না বলে দাবী করেছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯৫৬ সালে ব্যবসায়িক আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। আইনটি ১৯৮১ সালে সংশোধন করে ১০টি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনরে কাছ থেকে ‘ডিলিং লাইসেন্স’ নেওয়া অত্যাবশ্যক করা হয়।

লাইসেন্স ও নবায়নের জন্য নির্ধারিত পণ্যের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, জুয়েলারী, পাইকারী কাপড়, লোহা ও স্টিলের সামগ্রীর জন্য লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৩ হাজার টাকা ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। সিমেন্টের ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ৭৫০ টাকা। খুচরা কাপড় ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ১ হাজার টাকা ও ৫০০ টাকা। সুতার পাইকারি ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ১ হাজার ২০০ টাকা ও ৬০০ টাকা। খুচরা সুতার ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৫০০ টাকা ও ২৫০ টাকা। র্স্বণকারের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৫০০ টাকা ও ৫০০ টাকা। দুগ্ধ খাদ্যের জন্য লাইসেন্স ফি ৩০০ টাকা ও নবায়ন ফি ১৫০ টাকা। সিগারেট ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৩ হাজার টাকা ও ১ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়া পেপার বোর্ড, পাল্প বোর্ড, ওয়াল বোর্ড, ফাইবার বোর্ড, স্ট্র বোর্ড, বক্স বোর্ড ও সেলুলোজ ফিল্মের পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৮০০ টাকা। ইলেকট্রিক ও রেডিও পন্য, বৈদ্যুতিক ও যাবতীয় তার , টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও পাখার পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। ওইসব পন্যের খুচরা ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ১ হাজার ও ৫০০ টাকা। মেডিকেল ও সার্জিকেল দ্রবাদির পাইকারী ও পরিবেশক লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ৩ হাজার এবং ২ হাজার টাকা। গ্লাস ও গ্লাস ওয়ার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ হাজার ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। বাই সাইকেল, টায়ারটিউব ও খুচরা যন্ত্রাংশের পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ হাজার ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্যানিটারী ও পানি সরবরাহের ফিটিংিসের পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ হাজার ৫০০ ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। ওই পন্যেও খুচরা ব্যবসার লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ১ হাজার ও ৫০০ টাকা। ওয়াশিং, টয়লেট সোপ ও ভোজ্য তেলের পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা। চিনির পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০ ও ৫০০ টাকা। ভোজ্য লবনের পাইকারী ও পরিবেশকের লাইসেন্স ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৫০০ টাকা ও ২০০ টাকা। তবে জেলার প্রায় ১৫ হাজার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১ টি শিশু খাদ্য, ১৫ টি লোহা, ১৪ টি কাপড়, ২টি সিগারেট, ২৫ জন স্বর্ণকার ও ১২১টি স্বর্ণের দোকানের লাইসেন্স রয়েছে। প্রচারণা না থাকার কারনেই লাইসেন্স নিচ্ছে না এমনটাই দাবী ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুকুল জানান, তার সমিতির আওতায় ৫৩ টি মার্কেটের প্রায় ৩ হাজার দোকান রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট ও ফায়ার সার্ভিস অনুমোদন রয়েছে। ভ্যাট, কর দিয়ে ব্যবসা করে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু ডিলিং লাইসেন্সের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা কিছুই জানেন না। প্রশাসনের প্রচারণা ও তদারকি হলে ব্যবসায়ীরা এই লাইসেন্সও নেবেন।

জেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স না থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ব্যবসায়িক আইন ও লাইসেন্সের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা ও নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। আর এ কারণেই প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে লাইসেন্স না নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এনডিসি তাহমিনুল করিম জানান, ব্যবসায়ীদের ডিলিং লাইসেন্স নেওয়া অত্যবশ্যক। ব্যবসায়ীদের উদাসীনতার কারণে রাজস্ব আদায়ে সরকাররে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। গত জুন মাসে ডিলিং লাইসেন্স সংক্রান্ত গন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।