কেউ যোগাযোগ করছে সরকারের সঙ্গে, কৌশলী ভূমিকায় কোনো কোনো দল

ডেস্ক নিউজ: 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে ইসলামী দলগুলো। মাঠপর্যায়ে তারা নিজেদের শক্ত অবস্থান দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে কোন দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলে সংসদে আসন নিশ্চিত হবে এ জন্য মিত্রের সন্ধানে রয়েছে ইসলামী দলগুলো।
১৪-দলীয় জোটে থাকা তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা যায়, সংগঠনটি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে নতুন ইসলামী জোট গড়তে যাচ্ছে। জানতে চাইলে সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক বছর ধরেই তিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর মধ্যে কয়েকজন কওমিপন্থি নেতা নতুন জোট করার ব্যাপারেও ঐকমত্যে এসেছেন। তবে এই জোট কীভাবে সামনে এগোবে, নির্বাচনী তৎপরতা, নাকি কর্মসূচিভিত্তিক হবে— এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। এ জোট নির্বাচনকেন্দ্রিক, না কর্মসূচিভিত্তিক হবে, তাও এখনো ঠিক হয়নি।

জোটের বাইরে থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘এককভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে রয়েছি। তবে কোনো দল যদি আমাদের আদর্শ মেনে তথা সর্বস্তরে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে জোট করতে চায়, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। ’ মরহুম আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নির্বাচন সামনে রেখে তাদের নেতৃত্বে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। সংগঠনের অফিস ও বায়তুল মাল সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, তাদের নেতৃত্বে নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। জোট না হলে তারা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। একইভাবে ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করা ইসলামী ঐক্যজোটও আগামীতে ইসলামী জোট করে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানতে চাইলে সংগঠনের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘প্রকৃত ইসলামী দলগুলো নিয়ে আমরা ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা করছি। যদি এই জোট না হয়, তাহলে মিনার প্রতীকে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেব। ’ এদিকে বিএনপির সঙ্গে সখ্যে ভাটা পড়েছে শরিক ইসলামী দলগুলোর। মিত্র ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ সরকারি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। আবার কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমিয়ে শুধু কৌশলী সম্পর্ক বজায় রাখছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনের ডাকে সাড়া না দেওয়া, বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বেগম জিয়ার সাক্ষাৎ না করা, জোটে জামায়াতকে রাখা, আন্দোলনে সফল হতে না পারাসহ নানা কারণে আগামী নির্বাচনেও আশার আলো দেখছে না শরিক দলগুলো। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সখ্যে কিছুটা টান পড়েছে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর। দেশের বেশির ভাগ ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক হিসেবে রয়েছে প্রথম সারির তিনটি ইসলামী দল। এগুলো হচ্ছে—জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। আর সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করেছে। জোটের বাইরে আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে সম্প্রতি সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত আন্দোলন ও ভোটের রাজনীতির অংশ হিসেবেই ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে বিএনপির। তবে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় হতাশার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের রোষানলসহ নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে মিত্র ইসলামী দলগুলো। রাজনৈতিক কৌশলে ব্যর্থতার পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত থাকা এবং ইসলামী দলগুলোকে যথাযথ মূল্যায়নের অভাবসহ নানা কারণে বিএনপির প্রতি ইসলামী দলগুলোর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিভিন্ন ইসলামী দলের যোগাযোগ ও সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতিকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের বৈঠককে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী ও বিএনপির মিত্র হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী, ২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা নুর হোসাইন কাসেমীসহ শীর্ষ আলেমদের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে উপস্থিত হওয়ার খবরে বিএনপির নানা মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি জোটের ওপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, গ্রেফতার-হয়রানি থেকে নেতা-কর্মীদের রক্ষা এবং সরকারের চাপের কারণে গেল বছর ৭ জানুয়ারি বিএনপি জোট ত্যাগ করে পুরনো শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোট। তবে দলটির নামমাত্র একটি অংশ ওই জোটে থেকে যায়। একই বছর জোট ত্যাগ করে আরেক শরিক ইসলামিক পার্টির একাংশ। জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস ২০-দলীয় জোটে থাকলেও ভিতরে ভিতরে নানা কারণে বিএনপির প্রতি আস্থার সংকট রয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও জোট ত্যাগ করতে পারে। জানতে চাইলে দলটির ঢাকা মহানগর সভাপতি মনঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, ‘৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থা আমাদের রয়েছে। তবে জোটকেন্দ্রিক নির্বাচনে ১০টি আসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। এ ব্যাপারে জমিয়তের শীর্ষ নেতারা বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়া করবে। ’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী দলের একজন নেতা বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে কিছু ভুল আছে। তারা খুব বেশি সচেতন নয়। এ কারণেই ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ বিএনপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র ধারার ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বিএনপির সঙ্গে যাদের হৃদ্যতা ছিল, বর্তমানে নানা কারণে তা শিথিল হয়েছে। এর পেছনে বিএনপির যেমন ব্যর্থতা আছে, তেমনি তাদের অস্তিত্ব সংকটও কাজ করছে।