বাংলাট্রিবিউন:
সামরিক বাহিনীর কয়েকজন পথভ্রষ্ট সদস্যের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। এরপরে একই বছরের নভেম্বরে হত্যাকারীদের বাংলাদেশে থেকে থাইল্যান্ডে একটি প্লেনে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে অনেক খুনিকে চাকরি দেওয়া হয় বিভিন্ন দূতাবাসে।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে। দীর্ঘ আইনি-প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে ১২ খুনির মধ্যে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলো, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি)।

বাকি সাতজনের মধ্যে আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। বাকি ছয়জনকে সরকার এখনও দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাশেদ চৌধুরী

রাশেদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনীতিক পদে যোগদান করেন। তিনি নাইরোবি, টোকিও, কুয়ালালামপুর ও ব্রাসিলিয়াতে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ে তিনি ব্রাসিলিয়ায় কর্মরত ছিলেন। একই বছরের জুলাই মাসে তাকে ঢাকায় ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ব্রাসিলিয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাশেদ চৌধুরী সাও পাউলো থেকে সান ফ্রানসিসকো চলে গেছেন। ওই সময় থেকে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

২০১৪ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়। এরপরের বছর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ স্কাডেন আইনি প্রতিষ্ঠানকে তাকে ফেরত আনার জন্য নিয়োগ দেয়। বিখ্যাত আইনজীবী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভূতপূর্ব লিগ্যাল কাউন্সিলর গ্রেগরি ক্রেইগ তাকে ফেরত আনার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

রাশেদ চৌধুরীর ফেরত দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে এক বৈঠকে ২০১৫ সালে অনুরোধ জানান। এরপর ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরে এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্র সচিব হোয়াইট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।

সম্প্রতি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

নূর চৌধুরী

নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ব্রাসিলিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে তার কূটনীতিক জীবন শুরু করেন। তিনি আলজিরিয়া ও হংকংয়ে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি কানাডায় পালিয়ে যান।

২০০৪ সালে কানাডার অভিবাসন কোর্ট তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তখন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করার সময়ে তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানায়। ওই সময়ের বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহের কারণে তাকে ফেরত আনার কাজটি করা সম্ভব হয়নি।

এরপরে ২০০৭ সালে কানাডার সর্বোচ্চ আদালত রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেওয়ার পরে নূর চৌধুরী প্রি-রিস্ক রিমুভাল এসেসমেন্ট বিধির আওতায় কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আবেদন করেন। ওই আবেদন এখন পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি। এ সুযোগ নিয়ে কোনও স্ট্যাটাস ছাড়াই নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন।

২০১৫ সালে এ বিষয়ে তদবির করার জন্য টোরি এলএলবি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার সফরের সময়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র্যুডোর সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপরে অক্টোবরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কানাডা সফরের সময়ে এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনা হয়। তখন তারা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়।

শরীফুল হক ডালিম

শরীফুল হক ডালিম প্রথম কূটনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৭৬ সালে বেইজিংয়ে। ১৯৮২ সালে তাকে হংকংয়ে বদলি করা হয় এবং ১৯৮৮ সালে কেনিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসাবে পদায়ন করা হয়। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার তাকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠায়।

ধারণা করা হয় ডালিমের কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ব্যবসা আছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল পাঠিয়ে জানতে চায়, ডালিম পাকিস্তানে কোথায় আছেন?

গত মার্চ মাসে তাকে স্পেনে দেখা গেছে বলে খবর পাওয়ার পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের থেকে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছে।

রিসালদার মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পরে সরকার গত বছর জানতে পারে মোসলেহউদ্দিন আহমেদ জার্মানিতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বছরের জানুয়ারিতে জার্মান সরকারকে একটি নোট ভারবাল পাঠানো হয়। জার্মান সরকার এ বিষয়ে আরো তথ্য জানতে চেয়েছে এবং জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে।

খন্দকার আব্দুর রশীদ

খন্দকার আব্দুর রশীদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল দেওয়া হয় গত ডিসেম্বরে। কিন্তু এ বিষযে এখনও পাকিস্তান সমরকার কোনও উত্তর দেয়ানি।

আব্দুল মাজেদ

আব্দুল মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই।