কামাল শিশির, রামু (কক্সবাজার) :

পবিত্র ঈদুল আযহাকে (কোরবানীর ঈদ) সামনে রেখে কক্সবাজার রামুতে বিভিন্ন স্থানে পশু মোটা তাজা করণে এক ধরনের ক্ষতিকর বড়ি (পামবড়ি) ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগাক্রান্ত, কম ওজন ও কম বয়সী গরু, মহিষের দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের বড়ি খাওয়াচ্ছে। ফলে পশু এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উপজেলার সবর্ত্রে এ অপতৎপরতা চলছে। রশিদ নগর এলাকার জনৈক খুরশেদ আলম জানান, পামবড়ি খ্যাত ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা হলুদ ও সাদা রংয়ের এক ধরনের খোলা বড়ি ব্যবসায়ীরা পশু মোটা তাজা করণে বেশী ব্যবহার করছে। ভারতীয় পিরিয়াকটিন, থাইল্যান্ডের সাইকোডিন ও ডেক্সাউইন এবং দেশীয় তৈরী জেসন ফার্মার ডেক্সামিন, একমি’র স্টেরন এবং গ্লোব ফার্মার ডি-কট পামবড়ির তালিকায় রয়েছে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এসব ঔষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। সে আরও জানায়, দেশীয় তৈরী বড়িগুলোর দাম একটু বেশী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে বাইরে থেকে আসা খোলা বড়ির চাহিদা বেশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন গরু ব্যবসায়ী জানান, মোটা এবং দেখতে সুন্দর হলেই কোরবানীর বাজারে ওই পশুর দাম বাড়তি পাওয়া যায়। পামবড়ি খাওয়ালে গরু, মহিষ সুন্দর ও মোটা হয়ে যায়। কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে ব্যবসায়ীদের গরু মোটা তাজা করণের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাইরে থেকে আসা সাইকোডিন ও ডেক্সাউইন এক সাথে খাওয়ালে বেশী ফল পাওয়া যায় বলেই জানালেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পামবড়ি খ্যাত এসব ক্ষতিকর ট্যাবলেট শুধু পশু মোটা তাজা করণে নয়, মহিলারাও মোটা হওয়ার জন্য এ ট্যাবলেট সেবন করে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে। স্থানীয় ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, পশু এবং মানবদেহ দু’য়ের জন্য এ বড়ি ক্ষতিকর। পশু ছাড়াও কিছু কিছু মহিলা মোটা হওয়ার জন্য এ বড়ি খেয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে। এ বড়ির প্রভাবে মুখের দু’পাশ ফুলে যায়। আপাত দৃষ্টিতে মুখের এ অবস্থা দেখে মোটা হয়েছে মনে করা হলেও আসলে শরীরে পানি জমে এরকম হয়। এভাবে কয়েকমাস যেতে না যেতে শরীরে কিডনী সমস্যা, চামড়া ফেটে যাওয়া, বদ হজমসহ নানা জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। আর যেসব পশুকে এ বড়ি খাওয়ানো হয় ওই পশুর মাংস মানুষ খেলেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্থানীয় পশু ডাক্তার শাহাদত হোসেন মানিক জানান, পশুকে ক্ষতিকর এ ট্যাবলেট না খাওয়ানোর পরামর্শ দিই। এ বড়ি খাওয়ালে মাস-তিনেকের মধ্যে শরীরে প্রতিক্রিয়া হয়। পশুর শরীর মোটা দেখালেও বাস্তবে সে পরিমাণ মাংস বা ওজন বাড়ে না। বরং বড়ি খাওয়ানোর পর ওই পশুর শরীর আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, যেসব পশুকে এ বড়ি খাওয়ানো হয় সেসব পশুর মাংস সাদা ও স্বাদহীন হয়, রক্তের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এক পর্যায়ে মারা যায়। এসব পশুর মাংস খেলে মানুষের কিডনী সমস্যাসহ জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের জনৈক ডাক্তার জানান, ‘যে সব মহিলা মোটা হওয়ার জন্য এ ট্যাবলেট খান তাদের শরীরের হাঁড় নরম হয়ে যায়, শরীরে কালো কালো দাগ দেখা দেয়, ব্রেইন অপরিপক্ক হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়’। তিনি আরো জানান, ‘এসব মহিলারা যে সন্তান জম্ম দেন সে শিশুও জম্মের সময় মোটা থাকে পরে শিশুর ক্ষেত্রে একই সমস্যা দেখা দিতে পারে’।