আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার তিক্ততা বেড়েই চলেছে। এর জেরে নিজের শক্তিমত্তা ও সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প ও কিম।

চলতি মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছেন কিম। জবাবে, কোরিয়াকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিশ্ব রাজনীতি।
পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘রহস্যঘেরা’ উত্তর কোরিয়ার এ যুদ্ধের ডামাডোলে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষিত্রে সামনে এসেছে- শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য কোনটি বেশি ধ্বংসকারী; ট্রাম্প প্রশাসনের ডেরায় থাকা পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার, নাকি উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা।

নয়টি দেশের অধীনে রয়েছে বিশ্বের তাবৎ পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার। যার মধ্যে শীর্ষ দুই শক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ভাণ্ডারে রয়েছে প্রায় ৭ হাজার পরমাণু বোমা। বিপরীতে তালিকার তলানিতে থাকা কিমের হাতে রয়েছে ২০টিও কম পরমাণু বোমা।

ট্রাম্প-কিম দ্বৈরথে প্রশ্ন উঠেছে, কোনটি বেশি ভয়ঙ্কর? ট্রাম্পের অধীনে থাকা পরমাণু বোমার ভাণ্ডার, যার মধ্যে ২ হাজার পরমাণু বোমাই মোতায়েন করা রয়েছে; নাকি কিমের হাতে থাকা মাত্র ২০টি পরমাণু বোমা।

এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়েই মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গুয়ামে হামলা করা হবে। জবাবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়াকে এমন শিক্ষা দেওয়া হবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ট্রাম্পের জবাবকে ‘বোকামি’ বলে অভিহিত করায়- পিয়ংইয়ংকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পেন্টাগন বলেছে, উত্তর কোরিয়া চূড়ান্ত পরিণতিতে এসেছে, যা দেশটি ও তার জনগণকে ধ্বংস করে দেবে।

গত ৮ জুলাই ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অধীনে থাকা পরমাণু অস্ত্রের পরিসংখ্যান। যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ পরমাণু অস্ত্র, যেখানে রাশিয়ার রয়েছে ৭ হাজারটি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ৮০৬টি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারী বোমার অন্তত ১৭২২টি পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে।

এরআগে জুলাইতেই মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, কিমের হাতে অন্তত ৬০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। তবে স্টহকোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা সংস্থার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে এর গরমিল রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কিমের হাতে ১০-২০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে; আন্তঃমহাদেশীয় এ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনে আঘাত হানতে সক্ষম।

সক্ষমতা ও পরমাণু অস্ত্রের এই বিশাল অসমতা কিছু প্রশ্নের জন্ম দিলেও তার উত্তর মেলেনি। কার দ্বারা পৃথিবী অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে? কার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত পৃথিবীতে ভোগান্তি বাড়াতে পারে?

সেইসঙ্গে সামনে এসেছে আরেক প্রশ্ন- এ পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার ওপর বড় চাপ তৈরি করে কোন দেশ ফায়দা লুটছে; যেখানে অন্য বড় দেশ ও অঘোষিত পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দেশের বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্, রাশিয়া ও চীন পাল্লা দিয়ে পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়ন করছে। একইপথে চলছে ভারত, পাকিস্তান ও অঘোষিত পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ ইসরায়েল। কিন্তু বিশ্ব গণমাধ্যমে উঠে আসছে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা ও পরিণতির ভয়াবহতার বিষয়টি।

তবে উত্তর কোরিয়া জোর দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তার উত্তর কোরীয় নীতি পরিত্যাগ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে তার সেনাঘাঁটি সরিয়ে না নিলে, দেশটি পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করবে না।

৬ আগস্ট ১৯৪৫, প্রথমবারের মতো পরমাণু বোমার ভয়াবহতার শিকার হয় বিশ্ব। জাপানের নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পরমাণু বোমায় প্রাণ হারায় অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এর ৩ দিন পর হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের অপর পরমাণু বোমায় প্রাণ হারায় ৭০ হাজার মানুষ।

ওই নৃশংসতার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও শুরু হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্ত্র শক্তির দ্বৈরথ। এরপর থেকে ক্রমেই বেড়ে চলছে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার।