আবু তাহের, সমকাল :

সাংগঠনিকভাবে বিএনপির অবস্থান বেশ শক্ত কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা চারবার এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। তবে গত নির্বাচনে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাইমুম সরওয়ার কমল। ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম ও জনসম্পৃক্ততার কারণে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। যদিও একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করায় এরই মধ্যে এক ধরনের সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিতে অবশ্য এমন সংকট নেই। সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল একক প্রার্থী হবেন তাদের। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কাজও শুরু করেছেন তিনি।

সদর-রামুতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন আপাতত পাঁচজন- বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। মাঠ পর্যায়ে তারা সাংগঠনিকভাবেও তৎপর।

এ প্রসঙ্গে সাইমুম সরওয়ার কমল বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছে। এর মধ্যে চারটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন প্রকল্প, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, পর্যটনে ছয়টি মেগা প্রকল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্তত ২৫টি মেগা প্রকল্প রয়েছে। সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের জয় অনেকটা সহজ হবে। তিন বছর ধরে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। বন্যা দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকেছি। দলেও আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে দলের হাইকমান্ড আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে মনে করছি।

মজিবুর রহমান চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও সংগঠিত করছেন। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। তিনি প্রত্যাশা করেন, যোগ্য ব্যক্তিই মনোনয়ন পাবেন।

কানিজ ফাতেমা মোস্তাক জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তিনি সততার সঙ্গে পালন করছেন। তৃণমূল পর্যায়ে মহিলা আওয়ামী লীগকে আরও সংগঠিত করেছেন। এ ছাড়া তার স্বামী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীও ভালো কাজ করছেন। এসব বিবেচনায় দলীয় মনোনয়ন তার পক্ষে যাবে।

নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের ছোট বোন। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা নেই। মূলত এ বিরোধকে কেন্দ্র করেই দলের প্রার্থী হতে চাইছেন তিনি। যদিও নাজনীন সরওয়ার তা স্বীকার করছেন না। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী নেতৃত্ব তৈরির কাজে বিশেষভাবে আগ্রহী হওয়ায় প্রার্থী হতে চাইছেন তিনি। কমল ও কাবেরীর আরেক ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলও দলের সম্ভাব্য প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন। নবাগত লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদকে নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এ দলে। তিনি জানিয়েছেন, গত নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার জন্য এলাকাবাসীর চাপ ছিল তার ওপর। নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। এবার তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতার মতে, শেষ পর্যন্ত কে দলের মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানামুখী সন্দেহ, সংশয় ও দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে এখনই দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলে নির্বাচনে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমে তৎপর রয়েছেন। তবে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে, দলের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক এমপি সহিদুজ্জামানও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থীও হতে পারেন। মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে বিভিন্ন কার্যক্রম চালালেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তবে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সহিদুজ্জামান বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। তার পরও আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হই। কারণ আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী। নবম সংসদে বিরোধী দলীয় এমপি হয়েও আমি এলাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছি। সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছি। এসব কারণে দলের মনোনয়ন আমার পক্ষে থাকবে। নির্বাচনেও মানুষ আমাকে মূল্যায়ন করবে।

এদিকে বিএনপির জেলা কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে লুৎফুর রহমান কাজলের বিরোধ থাকলেও এখন তা মিটে গেছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দুই দফায় ভারতে গিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিরোধের অবসান ঘটিয়েছেন লুৎফুর রহমান। এতে দলের নেতা-কর্মীরাও ধীরে ধীরে চাঙ্গা ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর বেশ ভোট রয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লাহ। দলের শীর্ষ কমান্ডের সম্মতি পেলে তিনিও এ আসনে প্রার্থী হবেন। সমকালকে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে কক্সবাজার-৩ আসন চাইবে জামায়াতে ইসলামী। সে ক্ষেত্রে জোটপ্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন নিশ্চিত।