অনলাইন ডেস্ক:

আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। সারা দিন কাজ করে যেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করেন এবং সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে যান, তাঁদের মধ্যে প্রচুর প্রাণশক্তি দেখা যায়। সারা দিন নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ক্লান্তিবোধ কাটাতে কয়েকটি পরামর্শ মেনে চলতে পারেন:

সুষম নাশতা খানসুষম নাশতা খান
নিস্তেজ বোধ করছেন? আপনার খাবারের দিকে নজর দিন। চিনিভরা প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাবেন না। ওজন কমাতে গিয়ে নাশতার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাবার এড়িয়ে যাবেন না। মার্কিন পুষ্টিবিদ অ্যালিসা কোহেন বলেন, সব সময় সুষম নাশতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এতে শরীর সতেজ থাকে। বলা হয়, সকালের নাশতা দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। তাই এটি মোটেও এড়ানো উচিত নয়। সকালের নাশতা এড়িয়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এ সমস্যা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ক্ষেত্রে সকালের নাশতা এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় টাইপ টু ডায়াবেটিস তৈরি হয়। যাঁরা সকালে নাশতা করেন, নিয়মিত নাশতা না করা ব্যক্তিদের চেয়ে তাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাশতা না খাওয়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন প্রতিরোধ ও রক্তের চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। সকালের নাশতা না করলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে গ্লুকোজ কমে যায়, রক্তচাপ বাড়ে। এতে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়। মাথার চুলের ফলিকল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সকালের নাশতা। প্রোটিনবিহীন খাবার খেলে কেরাটিনের স্তরে প্রভাব পড়ে, যা চুল পড়ার হার বাড়ায়।

আরও পড়ুন:
সকালের নাশতায় যে ভুল করবেন না!

সামাজিক দক্ষতা বাড়ান
আপনার কাজে সব সময় ব্যস্ততা থাকে? ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে উদ্বেগ বাড়ে। এ সমস্যা কাটাতে মানসিক শক্তি বাড়ানো দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর প্লাস্টিক সার্জন অ্যালেক্স রোহার বলেন, প্রচুর কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি সামাজিক দক্ষতা দিয়ে সবকিছু সামলে নিতে পারেন। মানুষ তাঁর কর্মোদ্যমের রহস্য জানতে চান। তাঁর ভাষ্য, প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। অন্য মানুষের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের ফলে জটিলতা কাটিয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হয়েছেন তিনি। নতুন কিছু শেখার চেষ্টা থাকে তাঁর। মানুষের কথা শোনেন তিনি। সামাজিক উদ্বেগ কাটিয়ে নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলতেও সমস্যা হয় না তাঁর। রোহারের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নের অভ্যাস রপ্ত করা। নতুন মানুষের সঙ্গে মেশার বিষয়ে যখন চাপ ও উদ্বেগ থাকবে না, তখন আরও কর্মস্পৃহা তৈরি হবে।

সকালে সৃজনশীলতাসকালে সৃজনশীলতা
সকালে উঠে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারলে ভালো। ব্যায়ামের পাশাপাশি মস্তিষ্ক খাটাতে পারেন। মনোবিদ জিন ক্যাবালেরোর মতে, মনকে কর্মোদ্যম করতে সকালে উঠেই সৃজনশীল কাজে যুক্ত হোন। জিন বলেন, সকালে উঠে তিনি নিয়মিত পিয়ানো বাজান। এতে তাঁর মানসিক সক্ষমতা বাড়ে। মন চাঙা থাকে। সকালে কফির চেয়ে এটি ভালো কাজ দেয়। সারা দিন কাজের শক্তি জোগায়। সৃজনশীল কোনো কাজ বা দক্ষতা বাড়ানোর কাজগুলো সকালে শুরু করে দিতে পারেন। সেটা চিত্রাঙ্কন, লেখালেখি, নৃত্য, কবিতা লেখা বা যেকোনো সৃজনশীল কাজ।

বেশি করে পানি খান
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, হালকা গরম পানি ও হালকা নাশতা দিয়ে দিন শুরু করা উচিত। এতে শরীরের বিপাকপ্রক্রিয়া ঠিক থাকে। দিনের বেলা সোডা, কফি বা জুস কম করে খেয়ে বেশি করে পানি খেতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে সকালে যতটা সম্ভব পানি খান।

আরও পড়ুন:
সকালে উঠে যা খাবেন

পর্যাপ্ত ঘুমান
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের বিশ্রামে গড়ে প্রতিরাতে সাত-আট ঘণ্টা চোখ বন্ধ রাখা উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে স্মার্টফোন, ট্যাব, টিভির মতো আধুনিক যন্ত্রের সামনে সময় কাটিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো ঠিক নয়। যাঁরা সকালে নিজেদের সক্রিয় দেখতে চান, তাঁদের রাতে ডিজিটাল যন্ত্র বন্ধ করে যতটা সম্ভব দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাস গড়তে হবে। তথ্যসূত্র: হাফিংটন পোস্ট।