রাশেদুল মজিদ:

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিন ভাগে বিভক্ত কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এক ছাতার নিচে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক সমন্বয় বৈঠকের মাধ্যমে এক ছাতার নিচে আসতে সম্মত হয় তিন গ্রুপই। সকলের সম্মতিতে সর্বশেষ গঠিত হয়েছে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন পরিচালনা পরিষদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মিরাজুল ইসলাম উকিল, এস.এম. মাসুদুর রহমান ও ডিটিও (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ আবদুল মান্নানের স্বাক্ষরে গত ২৪ জুলাই কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার চেম্বারের বিবাদমান তিনটি পক্ষকে নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘আমার উপস্থিতিতে তিন পক্ষকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা সবাই এক হয়ে চেম্বারের কার্যক্রম চালাবেন বলে সম্মতি দিয়েছে। এরপরই মূলত: সবার অংশগ্রহনে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী এক বছরের জন্য গঠিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে শহরের বাজারঘাটাস্থ আবু শপিং সেন্টারের মালিক আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা) সভাপতি, কলাতলী সায়মন বীচ রিসোর্টের মোঃ সাবেদ উর রহমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শহরের এন্ডারশন রোডের আলকরম এর মেসার্স আলী এন্টারপ্রাইজের সৈয়দ মোহাম্মদ আলীকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া কমিটির ১৮ জন পরিচালক হলেন যথাক্রমে লালদিঘীর পাড়ের রনি এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল খালেক, সৈকত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, পানামা টেইলার্স এর মালিক উদয় শংকর পাল মিঠু, বিল্ড এক্স প্রোপার্টিজ এর মালিক রইচ উদ্দিন, সে ইয়েস এর মালিক ইমদাদুল হক, জারা ফিশারীজ এন্ড ট্রেডিং এর মালিক সাইফুল হক, সীমা কনষ্ট্রাকশন এর মালিক রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া, নীড ট্রেডিং এর মালিক মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম হেলালী, করিম এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মাহামুদুল করিম মাদু, তানভী ট্রেডার্সের নাজমুল হক চৌধুরী, জিয়া গেষ্ট ইনের মালিক শফিকুর রহমান, শাহপুরী হোল্ডিং এর এমডি মোঃ ইয়াহিয়া, এআর এন্টারপ্রাইজ এর শিবলুল করিম, মাল্টি লিংক এর আজমল হুদা, ফ্রেন্ডস ডেভলপিং বিজনেস ফার্মের হাসান মেহেদী রহমান, প্রীতম মেডিকোর স্বদিপ কুমার শর্মা, সাগর ফিশ এক্সপোর্টস এর আবিদ আহসান সাগর এবং এন.আর.সি ফিলিং ষ্টেশন ও এন. আলম ফিলিং ষ্টেশনের মালিক এইচ. এম নুরুল আলম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবে কক্সবাজার চেম্বারের নামে আলী আর্কেড মার্কেট ও হোটেল কোহিনুরে দুইটি গ্রুপের আলাদা কার্যালয় বন্ধ করে আপাতত আবু শপিং সেন্টার থেকেই চেম্বারের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। পরবর্তীতে নিজস্ব ভবনে কাজ শুরু করবে চেম্বার।

দীর্ঘকাল থেকে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর নামে পৃথক তিনটি কমিটি ছিল। আলাদা অফিস থেকে তাদের কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। এ নিয়ে বেশ বিভ্রান্তি ছিল। ব্যবসায়ীদের কার্যক্রমেও বিঘœ সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠনকে এক ছাতার নিচে আনতে নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন তরুণ ব্যবসায়ী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী। অবশেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ আবদুল মান্নানকে আহবায়ক করে তিন জন প্রতিনিধি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত শেষে সুপারিশমতে নতুন করে পরিচালনা পরিষদ অনুমোদিত হয়েছে।

নতুন কমিটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা) জানান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর কমিটি নিয়ে দীর্ঘ দিন সামান্য বিরোধ থাকলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। গত ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানকল্পে সমন্বয় সভা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। ঘোষিত নতুন কমিটি ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করবে।

চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সাবেদ উর রহমান  শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে কক্সবাজার চেম্বারে কোন্দল ছিল। কোন্দল নিরসনে আমি সবাইকে চেম্বারের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আর এতে আমি সফল হয়েছি, এটিই আমার আনন্দ।’

চেম্বারের সহ-সভাপতি কক্সবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর শহরের এন্ডারশন রোডের আলকরম এর মেসার্স আলী এন্টারপ্রাইজের সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন চেম্বারে বিভক্তি ছিল, যার কারণে পর্যটন রাজধানী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার বহুমূখী শিল্পের জন্য একটি সম্ভাবনাময়ী এলাকা হলেও চেম্বার এতোদিন পিছিয়ে ছিল। ব্যবসায়ীদের আস্থার কোন জায়গা ছিল না। এখন আমরা কোন্দল নিরসনে সফল হয়েছি। আশা করি নতুন নেতৃত্ব কক্সবাজার চেম্বারকে দেশের মধ্যে একটি সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। চেম্বারের নিজস্ব ভবন নির্মাণেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’

চেম্বারকে গতিশীল করতে সকলকে নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান তরুণ ব্যবসায়ী চেম্বারের পরিচালক এইচ এম নুরুল আলমও। এক্ষেত্রে তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।