ডেস্ক নিউজ:
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের খরচ কমানোর বদলে আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়,আগামী পাঁচ মাস বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা নীতিমালাও প্রয়োগ করা হবে না। এতে ব্যাংকগুলো আগের মতোই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের ওপর যেমন খুশি-তেমন সুদের হার আরোপ করতে পারবে।
তবে পাঁচ মাস পরে যে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা কার্যকর হবে তাতেও গ্রাহকদের স্বার্থ দেখা হয়নি। কারণ, গত ১১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা করেছিল, তা থেকেও সরে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক আগের নীতিমালায় সংশোধন এনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের অন্য যে কোনও ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডে পাঁচ শতাংশ সুদ নিতে পারবে।
এমন ঘটনায় অনেকেই বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাপেই ক্রেডিট কার্ড নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের গ্রাহকদের বিষয়টি দেখার কথা। তবে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকও তাদের মনযোগ থাকা উচিত। কিন্তু দেখা যায়, ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন ধরনের হিডেন চার্জও নেয় ব্যাংকগুলো। এর ফলে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৮ সালের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত কোনও নীতিমালার আওতায় আসবে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তারা আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে যেভাবে সুদ নিতো এখনও সেইভাবেই নেবে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা এখনই বাস্তবায়ন না করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের সেই প্রস্তাবগুলো বাস্তব সম্মতই ছিল। এ কারণে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন নীতিমালা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, সুদের হার নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে গত ১১ মে প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে সুদের হার বিষয়ে বলা হয়েছিল, ভোক্তা ঋণের সুদের হারের চেয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বেশি সুদ ক্রেডিট কার্ডে নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। গত ১১ মে থেকেই নীতিমালাটি কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের নীতিমালা থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো বলেছে তারা নাকি এখনও প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এ কারণে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ সময় বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো গুছিয়ে নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ভোক্তা ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হারের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড সুদ হার নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারি সিটি, ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং বিদেশি স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডে বিনা জামানতে ঋণের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন তারা।

উল্লেখ্য, ক্রেডিট কার্ড মূলত এমন একটি সেবা, যার মাধ্যমে গ্রাহক স্বল্প মেয়াদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। তবে এই সেবায় সুদের হার অনেক বেশি। বর্তমানে অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ৩০ শতাংশের বেশিও সুদ নিচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে অসন্তোষ। সেই অসন্তোষের কারণেই গত ১১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ভোক্তাঋণের সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ হার বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেটি সংশোধন করে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের অন্য যে কোনও ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ সুদ ক্রেডিট কার্ডে নিতে পারবে।

যেসব ব্যাংকে ভোক্তা ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। সেই ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদের হার হতো ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার পর যেসব ব্যাংক এসএমইসহ কিছু ঋণে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়,তাদের ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডে এখন সুদের হার হবে ২৫ শতাংশ ।

সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১১ মে জারি করা নীতিমালা বাস্তবায়নকালে ব্যাংকগুলো কিছু কিছু প্রায়োগিক ও কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি ‘সার্বিক বিষয়াবলী পর্যালোচনা করে ব্যাংকগুলোর পরিপালনের সুবিধার্থে’ নীতিমালার কিছু ধারা সংশোধন করা হয়েছে।

সংশোধিত নীতিমালায় গ্রাহকদের খরচ বাড়লেও অন্যান্য কিছু সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় বৈদেশিক মুদ্রা বা দ্বৈত মুদ্রায় সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আগে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

এছাড়া পরিবর্তিত নীতিমালায় কার্ডের বিল কালেকশনের সময়সীমা বন্ধের দিনে (সাপ্তাহিক ছুটি অথবা অন্য যে কোনও সরকারি ছুটি) শেষ হলে তা তার গ্রেস পিরিয়ড পরবর্তী কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানোর সুবিধা রাখার বিধান করা হয়েছে। কার্ডের অর্থ আদায়ে গ্রাহককে যখন-তখন টেলিফোনে অথবা অসময়ে বিরক্ত না করে উপযুক্ত সময়ে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। ক্রেডিট কার্ড সেবার প্রতারণা রোধে গ্রাহক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম-আচার মানার কথাও বলা হয়েছে।