বাংলাট্রিবিউন:
নতুন কোনও জোট নয়, নিজের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটই আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, ‘কোনও জোটে জাপার যোগ দেওয়ার ১ পার্সেন্টও সম্ভাবনা নেই। যে জোট আছে, সেটি নিয়েই নির্বাচনে যাব।’ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে বুধবার (২ আগস্ট) দিবাগত রাতে বিকল্প ধারা’র সভাপতি ডা. একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় কয়েকটি ছোট দলের বৈঠকে এরশাদের ছোট ভাই, জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘দলের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।’ ওই বৈঠকে বি চৌধুরীসহ নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জিএম কাদের জানান, তাদের প্রস্তাব দলের চেয়ারম্যানকে জানাবেন। তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন।

নতুন জোটের বিষয়ে আগ্রহী কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ‘১ পার্সেন্টও সম্ভাবনা নেই। ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই চলছে। আমরা এই জোট নিয়েই নির্বাচন করব।’

যদিও এরশাদের এই অবস্থান নিয়ে জাপার একাধিক নীতি-নির্ধারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, ‘এরশাদের অবস্থানের পরিবর্তন হবে। বিদ্যমান যে জোট এরশাদের নেতৃত্বে রয়েছে, তাতে জাপার বাইরে কোনও রাজনৈতিক নেতা নেই। এটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হাস্যরস চলছে।’

প্রসঙ্গত, ৭ মে ৫৮টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নামে বিশাল একটি জোট গঠন করেন জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২ টি নিবন্ধিত দল ও ২টি জোটসহ মোট ৪টি শরিক দল নিয়ে এ জোট গঠন করা হয়। সম্মিলিত জোটের শরিক দলগুলো হলো—জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)। এর মধ্যে ইসলামী মহাজোটে আছে ৩৪টি ইসলামী দল এবং বিএনএতে আছে ২২টি দল। সব মিলিয়ে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটে দল ৫৮টি। ইতোমধ্যে এই জোটটির শরিক দুটি দলে ভাঙন হয়েছে।

জাপার একজন সিনিয়র প্রেসিডিয়া সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই জোট তো হচ্ছে নমিনেশন-বাণিজ্য করার জন্য। নামসর্বস্ব দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে দলের একটি গ্রুপ চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে জোট কার্যকর রাখছে।’

জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, ‘বি চৌধুরী বা ড. কামাল হোসেনের জোটে অংশ নিলে জাপাই বেশি লাভবান হবে। ভিন্নভাবে দেখলে ওই জোটই রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে যাবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা জিএম কাদেরকে আমাদের কথা বলেছি। উনি বলেছেন, ‘জানাবেন’। এর বেশি তো কিছু বলা যাচ্ছে না।’’

জিএম কাদেরের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিষয়ে ৩ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এরশাদ বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী ইফতারের দাওয়াত করেছিলেন। তার অর্থ তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নন। না হলে আর কাউকে তো তিনি আমন্ত্রণ করেননি। সেই অনুষ্ঠানে তিনি আমার পাশে বসেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে প্রতীয়মান হয় না যে, তিনি মিত্র বাহিনীতে আছেন?’

গত ২ আগস্ট রাতে বি চৌধুরীর বাসায় চারটি দলের একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সমন্বয়ক করা হয় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। তাদের উদ্যোগে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব তো একটি জোটে আছেন। সরকারেও আছেন। তার অবস্থান পরিষ্কার হোক, এরপরই বলা যাবে, আমাদের উদ্যোগে তিনি অংশ নেবেন কিনা।’