রাশেদুল মজিদ:

সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে বিএনপিতে। সরগরম হয়ে উঠেছে জেলা বিএনপির কার্যালয়। পুরো দিনই বিএনপি কার্যালয় ঠাসা থাকছে নেতা-কর্মীতে। বিকালে থাকে নেতা-কর্মীদের ভীড়। গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম অবস্থা-যেন বিএনপি কার্যালয়ের এতোদিনের ‘ভূতুড়ে’ পরিবেশকে বদলে দিয়েছে। নিকট অতীতে এমন জমজমাট অবস্থা দেখা যায়নি বিএনপিতে। দলে দলে নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ড চোখে পড়ার মতো। এ অবস্থা শুধু বিএনপি’র নয়, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও তৎপর হয়ে উঠেছেন। আর এমন অবস্থায় বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নেতা-কর্মীরা এমনিতেই বেশ বেকায়দায়। প্রশাসনের কঠোর ভূমিকায় অনেকটা কোনঠাসা তারা। সরকারে না থাকায় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের নিগৃহের শিকার হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যও লাটে উঠেছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। কিন্তু সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে তাতে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন শীর্ষ নেতারা। মাঠ পর্যায়ে দলের প্রতি নেতা-কর্মীদের আগ্রহ দেখে অনেকটা নড়েচড়েও বসেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তারা রীতিমতো অবাক হয়েছেন তৃণমূল থেকে সাধারণ মানুষের এমন সাড়া পেয়ে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলায় দুই লাখ সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার ফরম বিতরণ করা হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে ফরমের চাহিদা। জেলা বিএনপি কার্যালয়ের পাশের এক দোকানদার বলেন, কয়েক মাস আগেও বিএনপি’র কার্যালয়ে তেমন কাউকে দেখা যেতো না। শুধুমাত্র কোন মিটিং থাকলেই তাদের দেখা যেতো। আর এখন দিন-রাত নেতা-কর্মীতে ভরা থাকে বিএনপি কার্যালয়। নির্বাচন হলে যে পরিস্থিতি হয় সেরকমই আমেজ বিরাজ করছে বিএনপি কার্যালয় ঘিরে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপি’র সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীতে জেলায় দুই লাখ মানুষকে অর্ন্তভূক্ত করতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে তরুণদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার ফরম বিতরণ করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দমন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি। এমনকি দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে কিনা তাও সন্দেহ। আর এর মধ্যেই তৃণমূল থেকে যে হারে সাধারণ মানুষ বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে-তাতে প্রমাণিত হয় কক্সবাজার আসলেই বিএনপি’র ঘাঁটি।’

একই কথা বলেছেন বিএনপি’র কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজলও। তিনি বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীতে মাঠ পর্যায় থেকে আশাতীত সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ মানুষ যেভাবে বিএনপি’র সদস্য হতে আগ্রহ প্রকাশ করছে, তাদের ফরম দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি’র কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষের এমন সাড়া ক্ষমতাসীনদের অপশাসন ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদ বলেই মনে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ টাকা দিয়েই ফরম কিনে সদস্য হচ্ছে।’

জেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক ইউছুফ বদরী জানান, গত ৪ জুলাই উখিয়ার রাজাপালং থেকে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী। শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূল থেকে। চাহিদামতো এই কর্মসূচী তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার ফরম বিতরণ করা হয়েছে। দিন দিন ফরমের চাহিদা বাড়ছে। তিনি আরও জানান, গতকাল পর্যন্ত মহেশখালীতে দেড় হাজার, কুতুবদিয়ায় আড়াই হাজার, চকরিয়ায় বাইশ হাজার দুইশত, টেকনাফে চার হাজার আটশত, উখিয়ায় সাড়ে ছয় হাজার, কক্সবাজার সদর-রামুতে পনের হাজার, পেকুয়ায় এক হাজার এবং জেলাব্যাপী সদস্য নবায়নের জন্য আরও এক হাজার ফরম বিতরণ করা হয়েছে। এসব ফরম টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা বিএনপি’র এ মুখপাত্র আরও জানান, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচী দুই মাসের। তবে জেলাব্যাপী তৃণমূল থেকে যেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সময় আরও বাড়াতে হবে। এবিষয়ে নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। এদিকে বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান এবং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাশেলও সংগঠনের সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল সমন্বয় করে একেক দিন একেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সদস্য সংগ্রহের এই কর্মসূচী তৃণমূলে ছড়িয়ে দেবেন।