ডেস্ক নিউজ:

বগুড়ায় ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে ধর্ষণের শিকার সেই কেলেজছাত্রী আদালতে নির্যাতনের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।এসময় ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম সুন্দর রায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এরআগে শিশু আদালতের বিচারক এমদাদুল হক ওই ছাত্রীর জবানবন্দি গ্রহণের অনুমতি দেন। আদালত তাকে হাসপাতালে প্রেরণ ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ সুপারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

শিশু আদালতের স্পেশাল পিপি মো. আমানুল্লাহ জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ওই ছাত্রীকে হাজির করা হয়। বিচারক এমদাদুল হক তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। পরে অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আবার তাকে শিশু আদালতে হাজির করলে নিরাপত্তা বিধানের আবেদন করা হয়। আদালত অসুস্থ ছাত্রীকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ ও তার চিকিৎসার পাশাপাশি পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী শহরের জুবলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করেন। কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু ওই তরুণীকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার আশ্বাস দেয়।

পরে দিপু ওই তরুণীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই তরুণীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু সেই কলেজে ভর্তি হতে পারেনি তরুণী। বিষয়টি পরে তুফান সরকারকে জানানো হয়।

গত ১৭ জুলাই তুফান সরকার তার স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই তরুণীকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার আশ্বাসে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে তরুণীকে আটকে রেখে দিনভর ধর্ষণ করে তুফান সরকার।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তরুণীকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি তরুণীর মা জানতে পারেন এবং বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ লোকমুখে জানতে পারেন শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের স্ত্রী। ২৮ জুলাই শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন, তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই তরুণীর বাড়ি যান। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ওই তরুণী ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে আসেন। সেখানে বিচারের নামে তরুণীকে খারাপ আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয় তরুণীর মায়ের বিরুদ্ধে।

এক পর্যায়ে তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী ওই তরুণী ও তার মাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। এতে তরুণী ও তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরে নাপিত ডেকে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।