ডেস্ক নিউজ:
ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি) অর্থায়নে বিডিআরসির পপুলেশন মুভমেন্ট এর অধীনে ফুড প্যাকেজ প্রোগ্রামে খাদ্যদ্রব্য বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসি) কর্মকর্তা সেলিম আহমেদের বিরুদ্ধে। এতে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বঞ্চিত উপকারভোগি ও খোদ বিডিআরসি কক্সবাজার ইউনিটে। কর্মকর্তা ও সংগঠকদের দাবী সেলিম আহমেদের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তছনছ হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার ইউনিট। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিডিআরসির প্রতি আস্থা উঠে যাচ্ছে।
বিডিআরসি কক্সবাজার ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সাতটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হল- মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলক সেবা, একতা ও সার্বজনিনতা। কিন্তু সেলিম আহমেদ এসব নীতি তোয়াক্কা না করে ত্রাণ বিতরণে ইচ্ছেমত লুপাট করে চলছে। যদিও রেডক্রিসেন্ট এর প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে রেডক্রিসেন্ট এর কর্মকর্ত ও ইউনিট কমিটির কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম রয়েছে তারপরেও তিনি কোন নিয়ম না মেনে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে নিজস্ব সিন্ডিকেট নিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আর বেপরোয়াভাবে লুটপাট করছে দরিদ্রদের ত্রাণ।
জানা গেছে, বিডিআরসি’র প্রতিটি প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাদের একাউন্টের মাধ্যমে। কিন্তু ফুড প্যাকেজ প্রোগ্রামসহ বহু প্রোগ্রামের এই নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। এই অর্থ লেনদেন করা হয়েছে এমআরআরও কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। এছাড়াও উপকোরভোগিদের কার্ডের তালিকা করতে হয় যুব রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির (আরসিওয়াই) সদস্যদের মাধ্যমে। কিন্তু সেলিম প্রতিটি প্রকল্পের উপকারভোগিদের তালিকা করে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। যাতে লুপাটের চিত্র প্রকাশ না পায়।
জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল টেকনাফের নয়াপাড়া মুচনী আলীখালী উলুসামালি এলাকায় ফুড প্যাকেজ প্রোগ্রামের ত্রাণ বিতরণের কথা থাকলেও সেখানে বিতরণ করা হয়নি। পরে একইদিন ওইদিন ত্রাণ গুলো আলীখালী, পানখালী ও লেদা এলাকায় নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২৯ টি কার্ডের বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। এতে প্রকৃত উপকারভোগিরা চরমভাবে বঞ্চিত হয়।
এরপর গত ১৪ এপ্রিল রোহিঙ্গা বস্তিতে সেলিম আহমেদ পছন্দের মানুষের কাছে প্রকাশ্যে ২৯ টি কার্ড বিক্রি করেন। যা নিয়ে ওই সময় হৈচৈ পড়ে যায়। গত ২০ এপ্রিল ওই একই প্রোগ্রামের ১৩১ টি কার্ড হোয়াইক্যংয়ে বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আরসিওয়াই কর্মীদের বাধ্য করে ১০১ টি কার্ড বিতরণ করে বাকি ৩০ টি কার্ড গায়েব করে। পরে ওই ৩০ টি কার্ডের ত্রাণ গুলো মাহিন্দ্রা গাড়ি করে কক্সবাজার শহরে নিয়ে আসে। এরপর অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। ওই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরসিওয়াই কর্মীদের নানা হুমকি ধমকি দেন সেলিম আহমেদ।
গত ১৮ এপ্রিল সাবরাং ইউনিয়নে ৯৫ টি কার্ড ভুয়া ও পছন্দের উপকারভোগি সাজিয়ে হাতিয়ে নেয়। একইভাবে ১২ এপ্রিল সাবরাং এলাকায় আরো ১৯ টি কার্ডের বিপরীতে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিডিআরসি কক্সবাজার ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, সেলিম আহমেদের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিডিআরসির অর্জিত সুনাম ও এই সংস্থার প্রতি মানুষের আস্তা একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই সংস্থাকে বাঁচাতে বেপরোয়া সেলিমের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সেলিম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

— দৈনিক সকালের কক্সবাজার