মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া:

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও কুতুবদিয়া উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্বে সৌভ্রাত দাশের বিরুদ্ধে সরকারী প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে দূর্নীতির মামলা হলেও এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় স্থানীয় সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা সৌভ্রাত দাশ দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পদে সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতিতে। বেশ কয়েকবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার বিভিন্ন জন লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করলেও রহস্যজনক কারণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ওই অনিয়ম, দূর্নীতির সাথে জড়িত সৌভ্রাত দাশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে সৌভ্রাত দাশ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েছেন দূর্নীতিতে। তার বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় এক নারী ইউপি সদস্য আদালতে দূর্নীতির মামলা দায়ের করলেও এখনো বহাল রয়েছে পিআইও সৌভ্রাত দাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ১,২ ৩ নং ওয়ার্ড়ে সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্য হামিদা আকতার গত ০৮/০৩/২০১৭ইংরেজী তারিখ কক্সবাজার জেলার সিনিয়র সেস্পাল জজ আদালত-১ এ ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা মোতাবেক পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশসহ আরো দুই জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। যার মামলা নং ৭/১৭ইং। ধারা ১০৯/৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ দ:বি। আর আদালতের মানণীয় বিচার মামলাটি আমলে নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মামলার এজাহারে বাদী হামিদা আকতার উল্লেখ করেছেন, সরকার প্রতি অর্থ বছরের ন্যায় বিগত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাটামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী কাবিটা প্রকল্পের আওতায় বন্যা বিধ্বস্থ মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিম কূল বেড়িবাঁধ ও শরৎঘোনা বেড়িবাঁধে বন্যায় বিধ্বস্থ অংশ মেরামতে জন্য সরকারীভাবে ১লাখ ১৬ হাজার ছয় ৬৮৬ টাকা বরাদ্দ দেন। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পেকুয়া উপজেলা পরিষদ সর্বস্মতিক্রমে তাকে (মামলার বাদীকে) সভাপতি করে মোট বরাদ্দের ১ম কিস্তির ৫৮ হাজার ৩৪৩ টাকা প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে তিনি পেকুয়ার ইউএনও ব্যাংক হিসাব থেকে ৫৫০ নং টোকেনের মাধ্যমে গত ২৬/০৬/২০১৬ইংরেজী সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংক, চকরিয়া শাখা হতে উত্তোলন করেন। তিনি ২য় ধাপের কার্য সম্পাদন করার পর বাকী টাকা উত্তোলনের জন্য পেকুয়ার পিআই সৌভ্রাত দাশের সাথে তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে পিআইও বিষয়টি গড়িমসি করে। গত ১৯/১০/২০১৬ইংরেজী তারিখ তারিখ মামলার বাদী জানতে পারেন যে, পিআইও সৌভ্রাত দাশসহ আরো কয়েকজন তার স্বাক্ষর জাল করে ভূঁয়া কাগজপত্র সৃজন করে পেকুয়ার ইউএনও হিসাব নং ২০৩ হইতে ৪৯৪৩৬৭৫নং চেকটি বিগত ১৪/০৮/২০১৬ইং তারিখ অনুমোদন করিয়ে ২৯/০৯/১৬ইং তারিখ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখা হইতে প্রকল্পের ২য় ধাপের ৪৩ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পেকুয়ার পিআইও একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের গৃহীত প্রকল্প পেকুয়া থানা কম্পাউন্ডের ভিতরে মাঠ ভরাটের নামে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হাতিয়ে নিয়ে দুই জন ইউপি সদস্যের সাথে সিন্ডিকেট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে পুরো বরাদ্দই লোপাট করেছেন। ২০১৭ অর্থ বছরে সরকারের ত্রাণ ও দূযোর্গ মন্ত্রণালয়ের বরোদ্দকৃত পেকুয়ায় ৮টি ব্রীজ নির্মান করা হয়। এসব প্রতিটি ব্রীজের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৯ লক্ষাধিক টাকার উপরে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটা ব্রীজের ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোট অংকের ঘুষ নিয়ে ওই ব্রীহগুলো কাজ নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে যেনতেনভাবে সম্পন্ন করেছেন। কুতুবদিয়ার একাধিক সচেতন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, বিগত ৪/৫ বছর ধরে কুতুবদিয়ার পিআইওর দায়িত্ব পালন করছেন সৌভ্রাত দাশ। প্রায় অর্থ বছরের অধিকাংশ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজন থেকে নির্দিষ্টহারে কমিশন আদায় করেছেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি কুতুবদিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোরার পর সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে কুতুবদিয়ার জন্য ৭৩টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেন। এখান থেকে ৫৪ টন চাল পিআইও সৌভ্রাত দাশসহ আরো কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজনের গোপনে আঁতাত করে গত জুন মাসের শেষের দিকে কক্সবাজার শহরে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

পেকুয়া উপজেলায় বিগত কয়েক বছর ধরে বহু নাম সর্বস্ব টিআর/কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে আঁতাত করে ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই পিআইও সৌভ্রাত দাশ। যাহা সরকারী উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম সরেজমিনে এসে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার টিআর/কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পগুলো তদন্ত করলে ওই পিআইওর বিরুদ্ধে আরো বহু অনিয়ম ও দূর্নীতিসহ সরকারী আত্মসাতের প্রমাণ মিলবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল দাবী করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার পিআইও সৌভ্রাত দাশের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিব না করায় এতদ সংগে তার বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

 

ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ে এ ভাবে দূর্ণীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তিনি অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।