ডেস্ক নিউজ:

বগুড়ায় শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকারের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকির হাতে মাসহ নির্যাতিত হওয়া কিশোরীটি জানিয়েছে, পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় এখন মীমাংসার নামে বিয়ের প্রস্তাবও দিচ্ছে তুফানের পরিবার। কিন্তু, এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সে বলেছে, ‘আমি তা চাই না। আমি ধর্ষক তুফান ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ গত শনিবার ও রবিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে নির্যাতিতা কিশোরীটি।

এ সময় তুফানের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার পুরো বিবরণ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে মেয়েটি। সে জানায়, ‘ধর্ষণের ঘটনার আগেও তুফান সরকার ও তার সাগরেদরা প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। এমনকি স্কুলে যাওয়ার পথে কিংবা বাসার বাইরে বের হলে আমার রিকশা আটকিয়েও ‘ইভটিজিং’ করতো তুফান এবং তার ক্যাডাররা। তারা আমার কাছে ফোন নম্বরও চাইতো।’

কিশোরীটি জানায়, ‘এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। এর মধ্যে একদিন তুফান সরকার ও তার লোক দিপু আমার রিকশা থামিয়ে উত্ত্যক্ত করে। তখন তাদের বলি পারলে যেন এ বিষয়ে আমাকে সাহায্য করে। এই সুযোগটাই যে তুফান নেবে তা বুঝতে পারিনি। তারা আমাকে ভর্তির ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। এরপর তুফান ও দিপু আমাকে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তারা কাগজপত্র চাইলে তাদের কাছে ভর্তির জন্য ৪ হাজার টাকাসহ মার্কসশিট জমা দেই। গত ১৭ জুলাই ভর্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে তুফান আমাকে তার চকসূত্রাপুরের বাড়িতে ডেকে পাঠায়। আমি যেতে চাইনি। কিন্তু সে খুব জরুরি বলে তার চালক জিতুকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে নিয়ে যায়। আমি জানতাম না সেসময় তার স্ত্রী আশা খাতুন বাসায় ছিলেন না। ফাঁকা বাসা দেখে আমি চলে আসতে চাইলে তুফান বাধা দেয়। এরপর সে আমাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগী মুন্না, জিতু ও আতিক পাহারা দেয়। আমার খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তুফান তার লোক আতিককে দিয়ে ওষুধ এনে দেয়। এরপর আমাকে ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য শাসায়। বলে, এ ঘটনা প্রকাশ করলে আমাদের বাড়িতে ককটেল মারবে। এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবে। লোকলজ্জা ও এই সন্ত্রাসীদের ভয়ে তখন এই ঘটনার কথা কাউকে বলতে পারিনি। এমনকি মাকেও বলতে পারিনি।’
.

(বাঁ থেকে) তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন, আশার বোন কাউন্সিলর রুমকি ও তাদের মা রুমা খাতুননির্যাতিতা কিশোরীটি আরও জানায়, ‘ঘটনাটি আমি প্রকাশ না করলেও তুফানেরই একজন ক্যাডার আতিক তার স্ত্রী আশাকে বলে দেয়। এতে আশা তার স্বামীকে দায়ী না করে আমাকে দায়ী করে এবং আমাকে ‘পতিতা’ বলে গালি দেয়। এরপর বিচার করার হুমকি দেয়।’
নির্যাতিতা কাঁদতে কাঁদতে জানান, ‘তুফানের স্ত্রী আশা খাতুনের বোন হচ্ছে বগুড়া পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত আসনের (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি। আশা তার বোন রুমকি ও মা রুমা খাতুনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে আমাকে ডেকে পাঠায়। ওইদিন আমরা বাসায় ছিলাম না। গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) কাউন্সিলর রুমকি তাদের ক্যাডার দিয়ে মাসহ আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে তার বাদুড়তলার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পর রুমকি তার ক্যাডারদের দেখাতে আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমাদের মারধর করতে থাকে। রুমকিকে মামী ডাকার পরও সে আমাকে ছাড় দেয়নি। আমার ও আমার নিরাপরাধ মা’রমাথার চুল কেটে দিয়েছে। এতেও রাগ না মেটায় তারা নাপিত ডেকে এনে আমাদের ন্যাড়া করে দেয় ।’
বগুড়ায় ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের মামলায় চার আসামি গ্রেফতারছাত্রীটি জানায়, ‘‘এরপর পৌরসভার কাউন্সিলরের প্যাডে জোর করে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের শরীরে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়। নির্যাতন শেষে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। না হলে তুফান বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে এসিড মারার হুমকি দেয়। এসময় রুমকি বলে, ‘তারা সরকারি দলের লোক। পুলিশ প্রশাসন তাদের হাতের মুঠোয়। কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না।’ পরে বাসায় পিকআপ পাঠিয়ে তাদের মালপত্র তুলে অন্য জায়গায় চলে যেতে বলা হয়।’’
নির্যাতিতা মেয়েটি আরও জানায়, ‘ স্থানীয় লোকজন আমাদের শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। সে রাতেই (শুক্রবার) পুলিশ তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু, তুফানের লোকেরা এখনও আশেপাশে ঘুরছে। এজন্য আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এখন পুলিশ আছে, পরে যখন থাকবে না তখন কী হবে?’
কিশোরীটি বলে, ‘পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মীমাংসা করার নামে তুফানের পরিবার থেকে আমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বড় বউকে (আশা) তালাক দেওয়ার কথাও হচ্ছে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। ও আমায় নষ্ট করেছে; কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই আমি তুফান ও নির্যাতনকারী রুমকিসহ অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’