আবদুল্লাহ আল মামুন :

মা আর মাটির সাথে এদেশের মানুষের শেকড়ের টান বহুপুরনো। কবির ভাষায়, আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। সেই মাটি আর কুমারের হাতের স্পর্শে তৈরি হয় অসাধারন এক শিল্প, মৃৎশিল্প।বাজার থেকে ক্রয় করা প্রতিটি মৃৎশিল্প পন্যের ৭০ ভাগ চলে যাবে সে সকল মৃৎশিল্পীর কাছে, যারা দেশ, মাটি ও ঐতিহ্য’কে বাঁচিয়ে রাখতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিটি মুহুর্ত।

আমার শৈশব কালে আমাদের এলাকায় মৃৎশিল্পীর কাজগুলো চোখে পড়ত।যে বাড়িতে যেতাম সেই বাড়িতে মৃৎশিল্প তৈরি করত।শৈশবকালে মাটির তৈরির পুতুল,সোয়াসা আমি নিজেই তৈরি করে এগুলো লাকড়ীর মাধম্য পুড়িয়ে খেলার উপযুক্ত করে আমরা খেলা করতাম।আমাদের শৈশবকালের প্রধান খেলনা ছিল মাটির জিনিস গুলো।আমাদের এলাকায় বছরে একবার শীতের সময় মৃৎশিল্পী কাজ করত।কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈজস পত্র মেলামাইন পণ্য সামগ্রীর ভিড়ে হারিয়ে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

আমার জন্মভূমি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রুমখাঁ কোলাল পাড়া গ্রামে।একসময় আমাদের গ্রামে মৃৎশিল্প তৈরি করা হত।শত শত পরিবার জীবিকার তাগিদে বাপ দাদার পেশা ত্যাগ করে দিনমজুর পেশায় চলে যাচ্ছেন।তারা ঐতিহ্যবাহী রুমখাঁ বাজার সাপ্তাহিক হাটে( সোমবার /বৃস্হপতিবার) মৃৎশিল্পের তৈরি করা কলসি,মটকা,হাড়ি,ফুলের টব,পুতুল সহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প বিক্রি করত।এছাড়া গ্রামে গ্রামে,এমনকি শহরেও ঝুড়িতে ফেরি করে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করা হতো।এখন এ দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।গ্রামের হাটবাজার এখন আলাদা করে মাটির জিনিস বিক্রির দৃশ্য অনেকটাই বিলীন।বিক্রি করে তাদের সংসার চালাত।এই শিল্প ছিল আমাদের গ্রামের লোকগুলোর জীবিকা নির্বাহের প্রধান হাতিয়ার।মাটির হাড়িতে রান্না করা দেশি ধানের লালচে রঙের নরম ভাতের সঙ্গে কৈ মাছের ঝোল খাওয়া এইসব এখন শুধু স্মৃতি।মিলিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

মৃৎশিল্প কিভাবে তৈরি করে আমি যতটুকু দেখছি তার বিবরণ:

আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রথমে তারা দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করে।এরপর মাটিগুলো টুকরো টুকরো করে হালকা পানিতে ভিজিয়ে রাখে।এরপর তারা মাটির তৈরি জিনিস তৈরি করার উপযুক্ত করে।কাঠের তৈরি মাটির যন্ত্রপাতি নিয়ে কলসি,হাড়ি,ফুল টব,মটকা,পুতুল সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করে।রোদে শুকায়। লাকড়ীর মাধ্যমে পুড়িয়ে মৃৎশিল্প তৈরি করা হতো।

সত্যিই শৈশবকালের কথা গুলো মনে পড়লে চোখে পানি আসে।চোখের সামনে আধুনিকতার কারণে আমাদের এলাকার মৃৎশিল্প গুলো এখন হারিয়ে গেছে।মনে প্রশ্ন জাগে কেন আধুনিকতা আমাদের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে বিলুপ্তি করেছে।